সবেমাত্র সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছিলেন দুলালসহ তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু এই সুখের সংসারে হঠাৎ করেই হানা দিলো ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ড।
বুধবার (৭ নভেম্বর) রাতের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যেভাবে ৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, ঠিক সেভাবেই যেন ওই বাড়িটির সব জৌলুস হারিয়ে গেছে। তাদের মৃত্যুর পর বাড়িটিতে বাতি জ্বালানোর মতো কেউই রইল না।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে জয়পুরহাট শহরের আরাম নগর মহল্লার দুলাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।
পুড়ে যাওয়া সেই বাড়িটি নিস্তব্ধতায় ঢেকে রয়েছে। বাড়ির চারপাশে পড়ে রয়েছে আগুনে পোড়া বাঁশ আর কাঠের টুকরো। ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে আট জনের পরিধেয় বস্ত্র ও পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের ধ্বংসাবশেষ। ওই বাড়িতে থাকা চারটি ঘরই এখন খোলা আকাশের মধ্যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘরের সদস্যদের হারিয়ে প্রতিবেশী আর স্বজনদের মতো বাড়িটিও যেন নির্বাক হয়ে পড়েছে।
দূর-দূরান্ত থেকে আজও (শুক্রবার) ‘অভিশপ্ত’ বাড়িটিকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাদের সবার আগ্রহ কিভাবে বাড়িতে এক সঙ্গে সবার মৃত্যু হলো? তাদের চিৎকার কি প্রতিবেশীরা শুনতে পায়নি? তাদের ঘরের দরজা এমন কিভাবে লাগানো ছিল যে তারা কেউ বের হতে পারলো না? এমন অনেক প্রশ্ন।
জয়পুরহাট সদরের বানিয়াপাড়া গ্রামের গৃহকর্ত্রী আম্বিয়া, হালট্রি গ্রামের কৃষক আনছার আলী, নতুন হাট স্কুলের শিক্ষক আয়েশা বেগম, শহরের হাসান টেইলার্সের কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান, পাঁচবিবি উপজেলার ব্যাংকার আব্দুর রহমানসহ অনেকেই এসেছেন বাড়িটি এক নজর দেখতে। তারা সেই বাড়িটির চারপাশে ঘুরে ফিরে দেখছেন। বাড়িটিতে কেউ নেই, আছে তাদের রেখে যাওয়া তিনটি ছোট মুরগির বাচ্চা। যে মুরগির বাচ্চাগুলো পরিনা বেগমের রেখে যাওয়া চাল ও ডাল কুড়িয়ে কুড়িয়ে খাচ্ছে।
বুধবার (৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জয়পুরহাট শহরের আরাম নগর মহল্লায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে গৃহকর্তা দুলাল হোসেন, তার স্ত্রী মোমেনা বেগম, তার ছেলে আব্দুল মোমিন, তার ছেলের বউ পরিনা বেগম, নাতনি মুনিরা আক্তার বৃষ্টি, হাসি, খুশি ও নাতি আব্দুর নূর মারা যায়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
জিপি