এই সপ্তাহে লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন চলতে না পারে সে জন্য কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১১ আগস্ট পর্যন্ত যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, ইনস্যুরেন্সসহ নানা কাগজপত্র ও এসবের মেয়াদ যাচাই-বাছাইয়ের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
এছাড়া নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় লার্নার নেওয়ার হিড়িক পড়ে ঢাকায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মিরপুর, সার্কেলে। গড়ে প্রতিদিন ৮৫০ থেকে ৯৫০ জন লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করেন চালকেরা। লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ আবেদন পত্রের যথার্থতা বিবেচনা করে তিন মাসের জন্য শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। এটা মূলত লাইসেন্স নয়, শুধুমাত্র শেখার অনুমতি। এই লাইসেন্স থাকা বা না থাকা প্রায় সমান। এই লাইসেন্স নিয়ে মূল সড়কে গাড়ি চালালে জরিমানা করতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কিন্তু এই লার্নার লাইসেন্স নিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ করেছেন চালকেরা। তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। যে হারে লার্নার নিয়েছেন, সে হারে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। একজন চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে যে সমস্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয় তা হলো - ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের দেওয়া শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ কালের মধ্যে ধার্যকৃত ৫১৮ টাকা ফিস জমা দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্র পাওয়ার পর লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিআরটিএ থেকে গড়ে ৮৫০ থেকে ৯৫০ জন লার্নার নিয়েছেন। কিন্তু খিলক্ষেত বিআরটিসি অফিসে এখন গড়ে মাত্র ২০০ জন লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। শিক্ষানবিশ বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে দুই থেকে তিন মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এটা অনেকে মানছেন না। ফলে ৯০০ জন লার্নার লাইসেন্স নিলেও গড়ে মাত্র ২০০ জনও মাঠে পরীক্ষা দিতে আসছেন।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, যে হারে লার্নার দেওয়া হয়েছে সেই হারে পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। লার্নারকে অনেকে মূল লাইসেন্স হিসেবে ধরে নিয়েছেন। ফলে লার্নার নিয়েই অনেকে লাপাত্তা। ট্রাফিক সপ্তাহও নেই, আমাদের এখানে চাপও নেই। অনেকে লার্নার নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরেরও গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ’
এ বিষয়ে বিআরটিএ'র উপ-পরিচালক মাসুদ আলম বাংলানউজকে বলেন, যে হারে লার্নার দেওয়া হয়েছে সেই হারে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। আশা করি, সবাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লাইসেন্স গ্রহণ করবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে লার্নার চালকের লাইসেন্স নয়। ’
লার্নার নিয়ে যারা গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ।
এই বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক( প্রশাসন) ইউছুব আলী মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, চাপে পড়ে অনেকে লার্নার নিয়েছেন। যা ভালো লক্ষণ। কিন্তু অনেকে লার্নারকে মূল লাইসেন্স হিসেবে মনে করছে। যা ঠিক নয়। গাড়ি চালাতে হলে অবশ্যই লার্নার জমা দিয়ে পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। আমরা ধরে নিয়েছি, কেউ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন না। কিন্তু এখন কেউ যদি লার্নারকে মূল লাইসেন্স হিসেবে চালিয়ে দেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
এমআইএস/এসআই