তারা হলেন- লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজিরচওড়া গ্রামের মৃত তারিণী চন্দ্রের ছেলে মসলার ফেরিওয়ালা প্রতাপ চন্দ্র রায় এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের উত্তর ধামুর গ্রামের তারিণী কান্তের ছেলে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (অবসর) প্রতাপ চন্দ্র রায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজিরচওড়া গ্রামের মসলা বিক্রেতা প্রতাপ চন্দ্রকে নিয়ে গত ২৫ জুন বাংলানিউজে ‘মসলার ফেরিওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি দৃষ্টিগোচর হলে তাকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) শফিউল আরিফ।
এরই মধ্যে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক ভাতা প্রদান না করতে লিখিত আবেদনে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করে বলেন, ‘এই গেজেটে রংপুর সদর উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের আওতায় ৩২৯ নম্বর বইয়ের বিপরীতে একই নামে একজন ২০১৪ সাল থেকে সম্মানী ভাতার আওতায় রয়েছেন। ’
উপজেলা প্রশাসনের আহ্বানে রংপুরের ভাতাভোগী শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র রায় কাগজপত্রসহ হাজির হলে তার সাক্ষাৎকারে যুদ্ধের ঘটনার বর্ণনা, দাখিল করা কাগজপত্র ও ঠিকানার যথেষ্ট গড়মিল দেখে সন্দেহ হয়। যুদ্ধের সময় কিছু দিন এই এলাকায় থাকায় ঠিকানা লালমনিরহাটের কাজিরচওড়া লিখেছেন দাবি করলেও কাজিরচওড়া গ্রামের কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাননি উপজেলা প্রশাসন।
শুধু তাই নয়, সনদে তার ঠিকানা রংপুর শহরের রাধাবল্লব বলা হলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে রয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার উত্তর ধামুর। ভাতা নিচ্ছেন রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা থেকে। এতেই শেষ নয়, লালমনিরহাটের কাজিরচওড়া গ্রামের প্রতাপ চন্দ্র রায় হিসেবে লাল মুক্তিবার্তার ৩১৪০১০৪৩৬ নম্বর ক্রমিক ব্যবহার করলেও সনদের ঠিকানা রংপুরের রাধাবল্লব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ (নম্বর ৩১০০৮) অনলাইনে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার এম এ খালেক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার তথ্য আসছে। যে সনদটি দিয়ে দীর্ঘ চার বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ও চাকরিতে বিশেষ কোটার সুবিধা ভোগ করে আসছেন তিনি।
সরেজমিনে রংপুরের গঙ্গাচড়া উত্তর ধামুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্রের বাবার নাম তারিণী কান্ত রায়। যুদ্ধের সময় তিনি নিজ গ্রামেই ছিলেন এবং গঙ্গাচড়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পরবর্তীতে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তিনি।
কথা হলে শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৯৯ সালে লালমনিরহাটের একজন মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় আবেদন করেন। ২০০০ সালে যাচাই-বাছাই শেষে তাকে সনদ দেওয়া হলে ২০১৪ সালে ভাতার আওতায় আসেন তিনি। ’
তার সনদে অনলাইনে অন্যজনের তথ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সনদপত্র প্রদানকারীরা প্রতারণা করেছেন। সমস্যা হলে ভাতা উত্তোলন করব না। ’ তবে নিউজ প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের লাল মুক্তিবার্তার ৩১৪০১০৪৩৬ নম্বর ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ৩০ মে প্রকাশিত বেসামরিক গেজেটের ৫১৪৫ নম্বর পৃষ্ঠার ৪৯৭ নম্বরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রয়েছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজিরচওড়া গ্রামের মৃত তারিণী চন্দ্রের ছেলে প্রতাপ চন্দ্র রায়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজিরচওড়া গ্রামের মসলার ফেরিওয়ালা প্রতাপ চন্দ্র রায় লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩৩৪ নম্বর ভোটার। তিনিও সম্মানী ভাতার জন্য কয়েক বছর ধরে সংসদ কমান্ডের নেতা ও সরকারী বিভিন্ন দফতরে ঘুরছেন।
মসলা বিক্রেতা প্রতাপ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, সম্মানীর জন্য নয়, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই।
লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক বাংলানিউজকে জানান, কাজিরচওড়া গ্রামে মৃত তারিণী চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রতাপ চন্দ্র রায় নামে একজন ব্যক্তিই রয়েছেন। যিনি ফেরিওয়ালা হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরম মসলা বিক্রি করেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায় বাংলানিউজকে বলেন, একই নামে দু'জন দাবি করায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্বাসন এবং ভুয়াকে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সনদ, ঠিকানা ও যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনায় শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র রায়ের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন ইউএনও।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
জিপি