বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা নবান্নের সকাল বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর)। নতুন ধানের চালের গুঁড়ায় পিঠা-পায়েস-ক্ষীর তৈরির সংস্কৃতিতে ভাটার টান পড়লেও নগর জীবনে গরম কাপড় মুড়ানো ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা বিক্রি করে সংসারের হাল ধরতে হয় কাউকে কাউকে।
তাদের অনেকের জানা নেই নবান্ন উৎসব কী? নগরায়ণের কষাঘাতে বরং তারা জানেন একবেলা পিঠা না বিক্রি করতে না পারলে উনুনে আগুন জ্বলবে না। ঘর থেকে বেরিয়ে দাঁড়াতে হবে খোলা আকাশের নিচে।
আবার কারো কাছে নবান্ন মানে কেবলই স্মৃতিময় দীর্ঘশ্বাস। এমন হিসাবে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতি ম্লান হয়ে পড়েছে তাদের ভুবনে।
প্রকৃতিতে শীত এখনো জেঁকে বসেনি মোটেও। তবে রয়েছে শীতের আমেজ। ফলে নগরীতে হাত বাড়ালেই মিলছে নানা রকম শীতের পিঠা।
সন্ধ্যায় এসব ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানগুলোতে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। তাদেরই একজন ফাতেমা বেগম (৪০)। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।
স্বামী-সন্তানসহ প্রায় ৬ বছর যাবত থাকেন ময়মনসিংহ নগরীতে। পিঠা বিক্রি করছেন নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায়। শীতের সকালে প্রতিদিন ভোরে উনুনে আগুন চড়িয়ে চালের গুঁড়া, নারকেল আর খেঁজুরের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটান ফাতেমা।
পাতলা কাপড়ের আস্তরণে হাঁড়ির টগবগে ফোটা গরম পানিতে ভাপ দিয়ে গোল আকারের পিঠা তৈরি করেন। সহজলভ্য উপাদানে মজাদার এ পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে পান ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। ভাপার পাশাপাশি ঝাল পিঠাও বিক্রি করেন তিনি।
গ্রামীণ জীবন পেরিয়ে আসা ফাতেমার কাছে নবান্ন উৎসব কেবলই স্মৃতি। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে অগ্রহায়ণের প্রথম দিনেই ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেত। প্রতিটি বাড়িতে পিঠা তৈরি হতো। এখন সেই আনন্দ নেই। নবান্ন উৎসবও নেই।
নগরীর পাড়া-মহল্লায় অভাবী বা স্বল্প আয়ের অনেকেই ফাতেমার মতো পিঠার দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালান। আর ভোর সকালে ফাতেমাদের দোকানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মজুর, রিকশাচালকরা।
তবে নবান্নের সকালে গরম ভাপা পিঠার স্বাদ নিলেও নবান্ন উৎসবের সঙ্গে পরিচয় নেই নগরীর একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুজ ও রাব্বীদের।
নগরের আধুনিকতার পরিমণ্ডলে বড় হওয়া এই শিক্ষার্থীরা দেখেনি নবান্নের ধান কাটা উৎসবে মুখর গ্রামের প্রতিটি গৃহকোণ। নতুন ধানের ম-ম গন্ধে মেতে ওঠার অনির্বচনীয় আনন্দ।
ওদের কাছে একেবারেই অচেনা ঢেঁকিতে ধান পিষে চাল তৈরি এবং সেই চালের গুড়ো দিয়ে পিঠা পায়েসের এলাহী আয়োজনের চিরন্তন দৃশ্য।
হেমন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা নবান্নের উৎস সন্ধান করার পেছনে না ছুটে ল্যাপটপ, ট্যাব বা কম্পিউটারের মনিটরে বুঁদ হয়ে থাকা। চিরায়ত ঐতিহ্য থেকে সটকে থাকা! নবান্নকে ভুলে যাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এমএএএম/এমজেএফ