হত্যাকাণ্ডের শিকার জরিনা খাতুনের মেয়ে রোজিনা খাতুনের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে নূর ইসলামের বিয়ের ঘটক ছিলেন স্বপন নামে এক ব্যক্তি। জামাই নূর ইসলামের অনুরোধে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে শ্বাশুড়ি জরিনা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নও করেন ঘটক স্বপন।
গত ১৬ নভেম্বর (শুক্রবার) দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার পরিকল্পনাকারী জামাই নূর ইসলাম (২৯) ও তার মা আমেনা বেগম (৪৮) এবং ঘটক স্বপনকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, ঘটক স্বপনের মধ্যস্থতায় ৫ বছর আগে রোজিনা ও নূর ইসলামের বিয়ে হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে প্রায়ই দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো। আর এই বিবাদ মেটাতে প্রায়ই রোজিনার মা জরিনা আশুলিয়ায় জামাই নূর ইসলামের বাড়ি আসতো। সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য কলহ প্রকট আকার ধারণ করে এবং এজন্য শ্বাশুড়ি জরিনাকে দায়ী করে। নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগম ঘটক স্বপনের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে।
তারা পরিকল্পনা করে শ্বাশুড়ি জরিনাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যেন সে আর তাদের বাড়িতে না আসে। এজন্য ঘটক স্বপন বলে, এটা কোন বড় বিষয় না। মাত্র ১০ হাজার টাকা দাও বিষয়টি সমাধান করে দিচ্ছি।
ঘটনার দিন দুপুরে সিরাজগঞ্জের নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় আসেন জরিনা ও তার বাবা আকবর আলী মন্ডল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিকেল ৫টার দিকে বাবাকে নিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন জরিনা। জামাই নূর ইসলাম তাদেরকে টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে তুলে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাসের হেলপার ও সুপারভাইজাররা আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়। তখন আকবর বিষয়টি নূর ইসলামকে জানালে স্বজনসহ পুলিশ এসে খোঁজাখুঁজি করে ৫০০ গজ দূর থেকে জরিনার মরদেহ উদ্ধার করে।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ঘটক স্বপন টাকার বিনিময়ে একটি অফরুটের গাড়ি ঠিক করে। সাধারণত সেসব গাড়ির নির্দিষ্ট রুট নেই, যখন যে দিকে যাত্রী পায় তখন সেই দিকে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নূর ইসলাম শ্বাশুড়ি জরিনা ও নানা শ্বশুর আকবর আলীকে ওই বাসে তুলে দেন। বাসে দুইজন হেলপার একজন সুপারভাইজার ও ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ ছিলো না। চুক্তি অনুযায়ী হেলপার ও সুপারভাইজাররা মিলে আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর জরিনাকে হত্যা করে আরেকটু দূরে ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু জরিনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা হাতে পাইনি এবং সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়া চারজনকে গ্রেফতার করা যায়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে জরিনাকে হত্যা করা হয়েছে।
বাসে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে, তবে আশা করছি শিগগিরই তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এরইমধ্যে বাসটি আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ৯ নভেম্বর দুপুরে জরিনা তার বাবাকে নিয়ে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় মেয়ের বাড়িতে যান। পরে সন্ধ্যায় বাবাকে সঙ্গে নিয়েই বাসে করে স্বামীর বাড়ি সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা একপর্যায়ে জরিনার বাবা আকবর আলী মন্ডলকে মারধর করে চলন্ত বাস থেকে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। পরে জরিনাকে মারধর করে হত্যার পর মহাসড়কের পাশে মরাগঙ্গ এলাকায় মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান চালক-হেলপার ও সুপারভাইজার।
১০ নভেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা থেকে মামলাটি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ১১ নভেম্বর মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই'র কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
পিএম/জেডএস