জাবালে নূর চলাচল করে দু’টি রুটে। একটি হলো মিরপুর ১ নম্বর থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত, আরেকটি হলো মিরপুর ১ নম্বর থেকেই আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত।
মিরপুর ১ নম্বর থেকে উত্তর বাড্ডার উদ্দেশে ছেড়ে আসা জাবালে নূরের একটি বাস মিরপুর ১০ নম্বরে যাত্রীর জন্য দাঁড়ালে কথা হয় গাড়িটির চালক সাহেদুল অালমের সঙ্গে। ফের চলাচল শুরু হয়েছে কি-না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অামাগোর বাসে কোনো সমস্যা নাই। ৯ তারিখ (৯ নভেম্বর) থেকেই চলছে। ’
গত ২৯ জুলাই র্যাডিসন হোটেলের বিপরীতে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূরের বেপরোয়া দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে একটি গাড়ির চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হন। ওই দুর্ঘটনার জন্য জাবালে নূরকে দায়ী করে এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভে নামে স্কুলশিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা যানবাহন ও এর চালকের কাগজপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সর্বস্তরের জনতার সমর্থনে সরকারও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে ১ আগস্ট বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানান, জাবালে নূর পরিবহনের বাস দু’টির রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তখন বিআরটিএ জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত দু’টি বাসের একটির (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৬৫৭) ফিটনেসের মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হয়, আর ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদও নেই। অন্য বাসটিরও কোনো রুট পারমিট নেই। এরমধ্যে একটি বাসের মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতারও করা হয়।
পরে বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই রুটে জাবালে নূরের ৭৯টি বাস চলাচলের অনুমোদন থাকলেও প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ি চালাতো কর্তৃপক্ষ। রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল এবং শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করার পর দুই রুটেই বন্ধ হয়ে যায় জাবালে নূর চলাচল।
যদিও পরে রং বদলে অন্য নামে জাবালে নূরের গাড়ি চলার খবর জানা যায়। আর গত ৭ নভেম্বর জাবালে নূরের মালিক শাহাদাতকে তিন মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রমও স্থগিত করেন আদালত।
বুধবার (২১ নভেম্বর) আগারগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জাবালে নূরের অনেক গাড়ির বডিতে রংয়ের অাচড় চলছে। এখানে অাকিক পরিবহন, তেতুলিয়া পরিবহন লেখা প্রায় ২০টা বাস রাখা হয়েছে। বাসগুলোর রং করে জাবালে নূরে রূপ দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবহনের নামে ছয়টি বাস রয়েছে রেশমা আক্তারের। বাসগুলো কিস্তিতে কেনা। ওই দুর্ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে বাসগুলো অাকিক পরিবহনের নামে চলেছে। এখন অাকিক থেকে অাবারও জাবালে নূরে রূপ দেওয়া হচ্ছে।
বাসের মালিক রেশমা অাক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘অামি ছয়টি বাস কিস্তিতে কিনেছি। মাসে ৪৪ হাজার টাকা কিস্তি। জাবালে নূর মানেই একসময় অাতঙ্ক ছিলো, সড়কে চললে ছাত্ররা ভেঙে দিতো। তখন বাধ্য হয়ে অাকিকের ব্যানারে চালিয়েছি। এখন অার সমস্যা নাই। দুইটা রুটই খোলা। তাই অাকিক থেকে অাবারও জাবালে নূরের ব্যানারে চালাবো, তাই রং করা হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘অার কোনো সমস্যা নেই। যেই রুটে সমস্যা ছিল সেই মিরপুর ১ নম্বর ও নতুনবাজার (উত্তর বাড্ডা) রুটেও গাড়ি চলছে। ’ তবে শুধু একটা রুটে চলছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেশমা বলেন, ‘অামরা অনেক খারাপ সময় পার করেছি। জাবালে নূর ব্যানার বদলে নানা ব্যানারে ভাগ হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে উঠতে সময় লাগছে, তাই একটা রুটে চলছে। ধীরে ধীরে সব বাস প্রস্তুত হলে সব রুটেই চলবে। ’
যোগাযোগ করলে বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অামরা যতোটুকু জানি সড়কে জাবালে নূর চলতে বাধা নেই। যে অপরাধ করেছে তার সাজা হবে, বাকিরা কেন সাফারার হবে? দু’টো বাসের জন্য এতোগুলো বাস কেন বসে থাকবে? জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল হয়নি। তাদের শুধু দু’টি বাসের রুট পারমিট ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে। যে দু’টি বাস ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’
তবে এতো দিন বন্ধ ছিল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ অালম বলেন, ‘বাসে বিভিন্ন সময় মেরামত করতে হয়। জাবালে নূরও খারাপ সময় পার করেছে। সেটা কাটিয়ে উঠতেই সময় লেগেছে। দু’টো রুটে জাবালে নূর চলতে কোনো সমস্যা নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
এমঅাইএস/এইচএ