মূল গণমাধ্যমের সঠিক ওয়েব পোর্টালের সাথে এসব ভুয়া পোর্টালের প্রায় শতভাগ সাদৃশ্য থাকায় পাঠকের জন্য আসল-নকলের ফারাক বোঝাটাও বেশ কঠিন। পোর্টালের ওয়েব ঠিকানায় একটি বা দুটি বর্ণের এদিক-সেদিকে খুব ভালো করে খেয়াল না করলে ঘোল খেতে পারেন সচেতন পাঠকরাও।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি মূলধারার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের নামে বানানো ওয়েবসাইট থেকে ভুয়া সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন সভা-সমাবেশের বরাত দিয়ে স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশিত হয় এসব ওয়েবসাইটে। সর্বশেষ গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনায়ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেসব ওয়েবসাইট থেকে।
মূলত এরপরেই নড়েচড়ে বসে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের একাধিক বিশেষায়িত বিভাগ। তবে এখনও নিয়ন্ত্রণে এনে ভুয়া সাইটগুলোকে বন্ধ করা যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, “গত রবিবার বিবিসি বাংলাসহ একটি পত্রিকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে আমরা তদন্তও শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তদন্ত করে দেখা গেছে যে, ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোর ডোমেইন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছে। তবে এগুলোর অ্যাডমিন প্যানেল আমাদের এখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। আর খুব সম্ভবত সবগুলো ভুয়া ওয়েবসাইট একই গোষ্ঠীর সদস্যরা পরিচালনা করছেন। আমাদের হাতে কিছু নাম ও নম্বর এসেছে। আশা করছি খুব দ্রুত চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে পারবো। ”
কোন এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের জন্যই এমনটা করছেন বলেও মনে করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “জনগণের মাঝে উস্কানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আতঙ্কিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করাই এ ধরনের অপরাধীদের মূল উদ্দেশ্য। ”
গণমাধ্যমগুলোর ডোমেইন নামের সাথে মিল রেখে পরিচালিত এসব ওয়েবসাইটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ডোমেইন কীভাবে কেনা যায় আর তা বাংলাদেশে কীভাবে পরিচালিত হয় এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের আইনি সীমাবদ্ধতার কথা জানায় সংস্থাটি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর বলবতে এ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তার দায়িত্ব-কর্তব্য ও এখতিয়ার সেখানে উল্লেখ আছে। তবে ডোমেইনের বিষয়ে আইনের ধারা-৩০ (ঝ)-তে বলা আছে যে, কমিশন ইন্টারনেট ডোমেইন নাম সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তা পরিবর্তনা বা সংশোধন এবং বাস্তবায়ন করতে পারবে। এছাড়াও ডোমেইন নাম সম্পর্কিত অভিযোগ ও বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। কিন্তু ডোমেইন নাম সম্পর্কে যে নির্দেশনা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে সেটিই তো এখনও প্রণীত হয়নি। ”
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপালনকারী মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, “বিষয়টি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের (মেধাস্বত্ব আইন) মধ্যে পড়ে। এখন কেউ যদি যথাযথ অভিযোগ এবং প্রমাণাদির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রমাণ করতে পারে যে, তাদের ওয়েবসাইটের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট করা হচ্ছে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সেটি জানালে আমরা ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেবো। অথবা আদালতের আদেশ পেলেও আমরা সেগুলো বন্ধ করে দেবো। এর বাইরে এমনিতে আমরা সেগুলো বন্ধ করতে পারি না। ”
মন্ত্রী আরও বলেন, “এটা যেহেতু মেধাস্বত্বের বিষয় তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরই দায়িত্ব তাদের মেধাস্বত্ব রক্ষা করার। আমার বিজয়ের (বিজয় কী-বোর্ড) নামে কেউ যদি কোন হরফ যোগ করে আরেকটি কিছু করে তাহলে সেটি রক্ষা করার দায়িত্ব আমারই। ডোমেইন বেচাকেনার বিষয়টি আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। ‘ডট বিডি’ ডোমেইন হলে সেটি হয়তো আমার এখতিয়ারে পড়তো। সেটি বিটিসিএল নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এর বাইরে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণে আমার মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসির এখন পর্যন্ত করার কিছু করার নেই। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এসএইচএস/এমজেএফ