তাই এসব দেবতাদের দানকৃত সম্পদ বা ফসলাদি ব্যবহার করার আগে প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ গারোরা তাদের উৎপাদিত ফসলাদি সুষিমি, সালজংসহ ওইসব দেবতাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করে। দেবতাদের উৎসর্গ করা ছাড়া গারোরা তাদের ফসল ব্যবহার করে না।
এই ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করে মান্দি গারো সম্প্রদায়। প্রতি বছরের মতো রোববার (২৫ নভেম্বর) পীরগাছা সেন্ট পৌলস্ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গারোদের ওয়ানগালা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন পীরগাছা সাধু পলের ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার লরেন্স রিবেরু সিএসসি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-ফাদার সৌমির রোজারিও, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, সাবেক উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক, পীরগাছা সেন্ট পৌলস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ এ মৃ, মার্টিন মিহি মৃ, মোনালিসা দারুসহ অনেকে। এছাড়া এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
দিনের শুরু থেকেই স্কুল মাঠের এক প্রান্তের সাজানো মঞ্চে কামাল (পুরোহিত) জলে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিয়ে জলকে পবিত্র করেন এবং ওই জল ভক্তদের উদ্দেশে সিঞ্চন করে বলেন “এই পবিত্র জলের সংস্পর্শে যারা আসবে তারা যেন পবিত্র হয়ে ওঠে, ঈশ্বরের সন্তান হয়ে ওঠে। ” পরে সেখান থেকে বাদ্য আর সংগীতে নেচে গেয়ে অতিথিদের মূল মঞ্চে নেয় গারো মেয়েরা। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য!
খ্রীস্টযোগ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠান শুরু হয়। মন্ত্র, সংগীত আর নৃত্যে উঠে আসে গারো সংস্কৃতি। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে গারোদের জীবন ঘনিষ্ঠ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
রুগালা, গোরীরুয়া, গ্রিক্কা, বিসাদিমদিমা, চাম্বিল মেসা, নকগাখা, চাওয়ারী সিকগা ইত্যাদি শিরোনামের অনুষ্ঠিত পার্বিক বিষয়গুলো গারো সংস্কৃতিকে পরিচিত করে তোলে। অনুষ্ঠানে ভুলে যাওয়া উপস্থাপিত অনেক বিষয় গারো মনে নাড়া দিয়ে যায়। মান্দি জীবনের নানাদিক নির্ভর গারোদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুষ্ঠান এই ওয়ানগালা (নবান্ন উৎসব) আজ অনেকটা সর্বজনীন হয়ে উঠেছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের গারোরা প্রতি বছর এ আয়োজন করে। এ আয়োজনে দেশি-বিদেশি অতিথি ছাড়াও ধর্ম বর্ণ নির্বশেষে অনেক লোকজনের সমাগম হয়। বর্ণাঢ্য এই আয়োজন উপস্থিতিদের মধ্যে তৈরি করে অভুতপূর্ব অনুভূতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
আরএ