একাধিক দোকান ঘুরেও খাবার না পেয়ে নগরীর নতুন বাজারের ভেতরের একটি হোটেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ওই কর্মকর্তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় রাতের খাবারের জন্য এই রেস্তোরাঁ, ওই রেস্তোরাঁয় হন্যে হয়ে ছুটার চরম দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘৭ থেকে ৮টি হোটেলে গেছি।
কোথাও খাবার নাই। এ হোটেলেও এক ঘণ্টা ধইরা (ধরে) দাঁড়াইয়া (দাঁড়িয়ে) আছি। স্যারের খাবার ম্যানেজের (সংগ্রহ) পর নিজের পরিবারের জন্যও খাবার নিতে অইবো (হবে)। ’
ময়মনসিংহ নগরীর মহারাজা রোড এলাকায় ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে রোববার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ভেকুর আঘাতে গ্যাসের পাইপ ফেটে যায়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকেই নগরীতে বন্ধ হয়ে যায় গ্যাস সংযোগ। ফলে শহীদুলের মতো অনেককেই স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে তীর্থের কাকের মতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।
এ সময়টাতে নগরীর প্রতিটি রেস্তোরাঁতেই যেন ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা! সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্যাস সংযোগ চালুর কথা জানান তিতাস গ্যাসের ময়মনসিংহের ম্যানেজার এ কে এম.মিজানুর রহমান।
দেখা গেছে, উপচেপড়া ভিড়ে অন্তহীন দুর্ভোগ সঙ্গী করে আবার হাসিমুখে অনেকেই খাবার নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। চাপ বেশি থাকায় বেশিরভাগ খাবারের দোকানিই খেই হারিয়ে ফেলেন। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে বচসার ঘটনাও ঘটে।
ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপে ব্যবসা ভালো হলেও চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে একটি খাবারের হোটেলের বিক্রয় কর্মী তমাল চন্দ্র দে জানান, আর চাপ কুলাতে পারছি না। ক্রেতাদের খাবার সরবরাহ করতে করতে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।
তবে এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ মিলার এমন সুসংবাদও খুশি করতে পারেনি শেফালী বেগম নামের এক গৃহিণীকে। নগরীর নতুন বাজার রোম থ্রি রেস্টুরেন্টে নান রুটি আর হালিমের জন্য দেড় ঘণ্টা ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
শেফালী বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় বাসায় রান্না করতে পারিনি। আর এখানে খাবার নিতে এসে গলদঘর্ম হতে হলো। এখন গ্যাস পেলেও বাসায় গিয়ে আবার রান্না করার মতো ধৈর্য্য-শক্তি নেই। আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হলেও এখান থেকেই খাবার কিনে নিয়ে যাবো। ’
একই খাবারের দোকান থেকে রাতের খাবার কিনতে পেরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসা সুনামগঞ্জের ছাতক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর মোহাম্মদের মধ্যে যেন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।
খুশির প্লাবন নিয়ে নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘খাবার ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হবে ভেবেছিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন। খাবার পেয়ে গেছি। কোনমতে রাত পাড়ি দেওয়া যাবে। ’
একই রকম চিত্র দেখা গেলো নগরীর বিভিন্ন বিরিয়ানি ও ফাস্ট ফুডের দোকানে। ডাল-রুটির জন্য রেস্তোরাঁগুলোতে হাহাকারের মধ্যে রমরমা ব্যবসা করেছে এসব ব্যবসায়ীরাও।
তবে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় ক্রেতাদের চাপ থাকলেও কোনো দোকানিই অতিরিক্ত দাম নেননি। ফলে এ নিয়ে কোনো রকম অভিযোগ করেননি ক্রেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এমএএএম/এসএইচ