বুধবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বাংলামোটরের ১৬ নম্বর লিংক রোডের ওই বাড়ির দোতলা বাসা থেকে অভিনব পন্থা অবলম্বন করে কাজলকে বের করে আনা হয়। পরে সেই বাসা থেকে কাফনের কাপড়ে পেঁচিয়ে আনা হয় সাফায়েতের মরদেহ।
এর আগে সকালে ওই শিশুর ‘মৃত্যু’র সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শাহবাগ থানা, রমনা জোনসহ পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। কিন্তু ধারালো দা হাতে নিয়ে কাজল কাউকেই বাসায় ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন বলেও জানাচ্ছিলেন স্থানীয়রা।
তখন র্যাব-২ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাজলের দোতলার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেও পারিনি। তিনি এক সন্তানকে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। হাতে তার দা। আরেক সন্তানকে কাফনের কাপড় পরিয়ে টেবিলের ওপর রেখেছেন। ভেতরে হুজুরের মতো একজনও দেখা যায়। আমরা বোঝাতে চাইলেও কাজল বলছেন, কে ডেকেছে আপনাদের? আপনাদের আসার দরকার নেই। ১টা বাজলেই আমার সন্তানকে দাফন করবো। আপনারা চলে যান। পরে বিশেষ কায়দায় কাজলকে বের করে আনার পর ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এহসানুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, দফায় দফায় বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে মসজিদে মাইকিং করি আমরা যে, সাফায়েত মারা গেছে, বাদজোহর তার নামাজে জানাজা হবে। এরপর কাজলের সঙ্গে মসজিদের হুজুরদের দিয়ে কথা বলানো হয়। তাকে বলা হয়, সাফায়েতের জানাজা পড়াবো, সবাই মিলে মাটি দেবো। আপনি বেরিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে জীবিত শিশুটি (সুরায়েত) নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসেন। তখন মৃত সাফায়েতের মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে আসেন আরেক হুজুর। নিচে এলে আমরা কাজলকে ধরে ফেলি।
এহসানুল ফেরদৌস জানান, শিশুটির বাবা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন- সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। তবে মরদেহের ময়না-তদন্ত হলে বোঝা যাবে।
পরে কাজলকে আটক করে এবং শিশুটির মরদেহ নিয়ে শাহবাগ থানায় চলে যান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান।
পুলিশের গাড়িতে তখন সাফায়েতের মা প্রিয়া ও চাচা নুরুল হুদা উজ্জ্বলকে দেখা যায়।
সেখানে সাফায়েতের ফুফু রোকেয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা ছিলেন মনু মেম্বার। সাত ভাই সাত বোন আমরা। বাবা সবার প্রাপ্য সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন। ভাগ অনুযায়ী ভাই এখানেই (বাংলামোটর) থাকতেন। তিনি পাগলামি করতেন, পাগলামি করে গত তিন মাস আগে বাসা থেকে সবাইকে বের করে দেন। সেজন্য স্ত্রীও অন্য জায়গায় থাকতেন।
তবে কাজল সন্তানদের খুবই আদর করতেন বলেও জানান রোকেয়া। তিনি জানান, পাগলামির কারণে তিন মাস আগে পরিবারই ভাঙচুরের মামলা দিয়েছিল, সে কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। পরে আবার স্ত্রীই তাকে জামিন দিয়ে বের করে আনেন। বুধবার সকালে উজ্জ্বলকে ফোন দিয়ে কাজল জানান, সাফায়েত মারা গেছে। কিন্তু সবাই ছুটে এলে কাজল দা হাতে নিয়ে তাড়িয়ে দেন।
ওসি আবুল হাসান জানান, তিন মাস আগে ভাঙচুরের কারণে মামলা দিয়ে কাজলকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছিল। সম্পত্তি নিয়ে পরিবারটির মধ্যে গণ্ডগোল লেগেই থাকতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এজেডএস/এইচএ/