সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালে গুটি কয়েক পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ভোমরা শুল্ক স্টেশন। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতায় বন্দরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি থমকে দাঁড়ালেও ২০১৩ সালের ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে ৪৪টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু অবকাঠামোগত অসুবিধা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ৭৭টি পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও সময়ভেদে ৩০-৩৩টির বেশি পণ্য আমদানি করতে ব্যর্থ হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। রপ্তানির ক্ষেত্রেও রয়েছে একই জটিলতা।
বন্দর সূত্র জানায়, ভোমরা বন্দরে পাকিস্তান আমলে নির্মিত দু’টি শেডে চলছে শুল্ক স্টেশনের সামগ্রিক কার্যক্রম। রাজস্ব কর্মকর্তা, সুপার বা সহকারী কমিশনারদের জন্য বসার ভাল ব্যবস্থাও নেই। এছাড়া মোটর পার্টস, ইমিটেশন জুয়েলারির মত উচ্চ কর যুক্ত পণ্যগুলোর আমদানি ছাড়পত্র খুলনা কাস্টমস্ হাউজ থেকে গ্রহণ করা, বন্দরে জনবল সংকট, হ্যান্ডলিং উপকরণের স্বল্পতা ও সক্ষমতা না থাকায় আশানুরূপ গতি পাচ্ছে না বৈদেশিক বাণিজ্য।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ভোমরা শুল্ক স্টেশনে যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদায়ন করা হলে এই জটিলতা কেটে যাবে। এ লক্ষ্যেই ভোমরা শুল্ক স্টেশনে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট যুগ্ম কমিশনার হিসেবে কাজী ফরিদ উদ্দীন যোগদান করলেও ২০১৭ সালের ৪ মে তাকে খুলনা কাস্টমস্ হাউজ প্রত্যাহার করে নেয়।
এ বিষয়ে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. অহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে জমি অধিগ্রহণ হলো বড় বাধা। ভোমরা বন্দরের উন্নয়ন করতে হলে প্রথমে কাস্টমস্ হাউজের উন্নয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরের আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়াটাও বড় সমস্যা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ৩৩টি পণ্য আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় যুক্ত হলেও তার কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চ করযুক্ত পণ্য সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের না থাকা এবং খুলনা কাস্টমস্ হাউজ থেকে আমদানি ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকায় আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন না। ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ উচ্চকর হারযুক্ত পণ্যের আমদানি ছাড়পত্র ভোমরা শুল্ক স্টেশন থেকে পাওয়া গেলে ভোমরা বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে গতি বাড়বে। এজন্য এখানে জেসি বা যুগ্ম কমিশনার পদ মর্যাদার কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার সাগর সেন বাংলানিউজকে জানান, ভোমরা শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামোগত সংকট প্রকট। রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উচ্চ করহার যুক্ত পণ্যের আমদানি ছাড়পত্র খুলনা কাস্টমস্ হাউজ থেকে দেওয়া হয়।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং এর ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
বর্তমানে ভোমরা শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে যেসব পণ্য আমদানি হচ্ছে: ফল, পাথর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, খৈল, শুটকি মাছ, মাছ, হলুদ, পান, তেঁতুল, শুকনা কুল, শুকনা মরিচ, স্যান্ড স্টোন (শিলপাটা), মার্বেল চিপস, বল ক্লে, ফায়ার ক্লে, চায়না ক্লে, সোডা পাউডার, কোয়ার্টজ, পটাস ফেল্পসপার।
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়: গম, ভুট্টা, কাঁচা মরিচ, তুলা, কয়লা, রাসায়নিক সার। বছরে ২-৩ বার আসে যেসব পণ্য: জিরা, আগরবাতি, জুতার সোল, ফিটকিরি।
অনুমোদন থাকার পরেও প্রশাসনিক জটিলতায় নিম্নলিখিত পণ্য ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে না: গবাদিপশু, মাছের পোনা, গাছ গাছড়া, বীজ, কাঠ, টিম্বার, চুনা পাথর, মশুর ডাল, তাজা ফুল, গমের ভুষি, চালের গুড়া, সয়াবিন কেক, মসলা, মোটর পার্টস, স্টেইনলেস স্টিল ওয়্যার, রেডিও টিভি পার্টস, মার্বেল স্লাব, তামাক ডাটা, এ্যালুমিনিয়াম এর টেবিল ওয়্যার ও কিচেন ওয়্যার, এডহেসিভ, তাজা সবজি, ধনে, ফ্লাই এ্যা, গ্রানুলেটেড স্লাগ, তিল, সরিষা, রেডিমেড গার্মেন্টস, ইমিটেশন জুয়েলারি, সুপারি ও হার্ডওয়্যার গ্রানাইট স্লাব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
আরএ