বুধবার (০৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই বেইলি রোড ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা। দুপুরের পর ছয়দফা দাবি সম্বলিত সাংবাদিকদের একটি লিফলেট দেওয়া হয়।
দাবিগুলো হলো- অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদের পদত্যাগের লিখিত আদেশ জনসম্মুখে দেখাতে হবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ভিকারুননিসা স্কুলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, কথায় কথায় টিসির ভয় দেখানো যাবে না, মানসিক সুস্থতার জন্য শিক্ষকদের মানসিক চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে ও গভর্নিং বডির সবাইকে অপসারণ করতে হবে।
এদিকে, কিছুক্ষণ পরপরই (বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠানটির একেকজন শিক্ষক এসে সব দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি জানান। তাদের বার বার ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো কথা না শুনেই তাদের অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজধানীর শান্তিনগরে গলায় ফাঁস দিয়ে অরিত্রী অধিকারী (১৫) নামে ভিকারুননিসার এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। অরিত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখার নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রীর বাবা। মামলার আসামিরা হচ্ছেন অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা।
এ ঘটনায় ভিকারুননিসার শিক্ষক আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান ও গভর্নিং বডির সদস্য ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তারকে বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উভয় কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার সরকারকে নিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট আলাদা একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে অরিত্রী চৌধুরী কেন আত্মহত্যা করেছে এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং বিচারক থাকবেন। তারা অরিত্রী আত্মহত্যার ঘটনা এবং সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটনা তদন্ত করে কারা দায়ী এগুলো খুঁজে বের করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেবেন।
তার বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, অরিত্রীর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার (২ ডিসেম্বর) পরীক্ষা দেওয়ার সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের স্কুলে যেতে বলে। স্কুলে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায়, তার মেয়ে পরীক্ষার হলে মোবাইলের মাধ্যমে নকল করছিল। তাই তাকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খবর শোনার পর স্কুল থেকে অরিত্রী বাসায় ফিরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
পিএম/এসএইচ