মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের সাত ঘরিয়া পাড়া গ্রামে খালেদা মারা যান। তিনি ওই গ্রামের উলা মিয়ার মেয়ে এবং আজিজ মিয়ার স্ত্রী।
খালেদার মৃত্যুর খবর পেয়ে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লুৎফুর রহমান, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম ও রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছানা উল্লাহ তার বাড়িতে যান। এসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খালেদা বেগমের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেন ইউএনও।
খালেদা বেগমের বড় ভাই নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, বিয়ের ১২-১৫ বছর পরেই তার বোন ও সন্তানদের ফেলে অাজিজ মিয়া চলে যান। সেই থেকে আর তাদের সঙ্গে আজিজের কোনো যোগাযোগ নেই। এ অবস্থায় ছোট ছোট ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে খুব বেকায়দায় পড়েন খালেদা বেগম। যাপন করতে থাকেন মানবেতর জীবন। এক পর্যায়ে খালেদা বেগম পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৯ শতক জমিতে ছোট একটি ছনের ঘর করে বসবাস করছিলেন।
সম্প্রতি ওই জমিটি রেললাইনের জন্য অধিগ্রহণ করা হলে ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখায় দফায় দফায় যোগাযোগ করেন খালেদা বেগম। কিন্তু ওই জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ক্ষতি পূরণের টাকা পাচ্ছিলেন না খালেদা।
এর মধ্যে রেললাইনের কাজ শুরু করার জন্য তাকে ভিটেটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হলে দিশহীন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর গত ২২ নভেম্বর থেকে বসতভিটের সুপারি গাছ কাটা শুরু করা হয়। এ দৃশ্য দেখে আহাজারি করতে থাকেন খালেদা, এক পর্যায়ে ব্রেইন স্ট্রোকও করেন তিনি।
জমি নিয়ে জটিলতার বিষয়টি তুলে ধরে নুরুল আলম জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৯ শতক জমিতে ২০ বছর ধরে বসত বাড়ি তৈরি করে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন খালেদা। কিন্তু মৌখিক দানপত্র করার ভুয়া তথ্য দিয়ে একটি মামলা করে ২০১৩ সালে আদালত থেকে ডিক্রি নিয়ে জমিটি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন ইটভাটা মালিক মোজাফ্ফর আহমদ। পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে খালেদা বেগম ওই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, যা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
খালেদার বড় ছেলে হারুন তার মায়ের মৃত্যুর জন্য সম্পর্কে মামা মোজাফ্ফর আহমদকে দায়ী করে বলেন, তিনি (মোজাফ্ফর) মামলা দিয়ে হয়রানি না করলে এতোদিনে আমরা রেলের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যেতাম। অন্যত্র জমি কিনে বসবাস করতে পারতাম। আমরা মোজাফ্ফর আহমদের কঠোর শাস্তির দাবি করি।
এ বিষয়ে ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। রেলের কাজ শুরু হয়ে গেলেও তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন খালেদা বেগম। যে কারণে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লুৎফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ সহসা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খালেদা বেগমের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এইচএ/