ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যাত্রী তল্লাশিতে বাধা,বিজিবির লাঠিচার্জে আহত ৫

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
যাত্রী তল্লাশিতে বাধা,বিজিবির লাঠিচার্জে আহত ৫ ...

সিলেট: ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি নিয়ে বিজিবি ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের হামলা ঠেকাতে লাঠিচার্জ করেছে বিজিবি। এতে ৫ কাস্টম কর্মকর্তা-কর্মচারি আহত হয়েছেন।  কাস্টমসের লোকজনের পাথর নিক্ষেপে বিজিবি’র এক নারী সদস্যও আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (০৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেটের তামাবিল শুল্ক স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বিজিবি‘র নারী সদস্য ছাড়াও কাস্টমসের আহতরা হলেন, তামাবিল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তুহিন চৌধুরী, মোস্তাফিজ, গাড়ি চালক রাকিব উদ্দিন, বিশ্বজিত ও সজল কান্তি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এদিন বিকেলে ভারতীয় নাগরিক সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রোপেন, রবার্ট থারংসি ও মতি সরণ নামক তিনজন তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

তামাবিল জিরো পয়েন্টে আসার পর চেকপোস্টে দায়িত্বরত বিজিবি’র জওয়ানরা তাদের ব্যাগ তল্লাশি করতে যায়। এতে কাস্টমসের লোকজন এগিয়ে এসে বিজিবি জওয়ানদের ব্যাগ তল্লাশিতে বাধা দেয়।

বিজিবি সদস্যরা ব্যাগ তল্লাশি করে যাত্রীদের কাছ থেকে তিন বোতল মদ উদ্ধার করেন। এমন সময় কাস্টমসের ১০/১২ জন লোক এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ টানাটানি করে নিয়ে শুল্ক স্টেশনের অফিসে ঢুকে পড়ে।

চেকপোস্টে এসময় বিজিবির ২ জওয়ান ও ২ নারী জওয়ান কাস্টমসের লোকজনের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ঘটনাটি বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন জওয়ানরা। পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানতে পেরে মীমাংসার উদ্যোগ নেন এবং শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জওয়ানদের কাছে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। ততক্ষণে সিলেট থেকে মেজর মেহেদিও ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তির বদলে বেঁকে বসেন শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

সন্ধ্যায় তারা শুল্ক স্টেশন থেকে বেরিয়ে দল বেধে আসলেও মাফ চাওয়ার বদলে বিজিবি‘র জওয়ানদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়েন। এতে সীমান্তে কর্তব্যরত বিজিবির এক নারী সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তামাবিল ফাঁড়ি থেকে বিজিবি‘র আরো কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে যান। এসময় লাঠি পেটায় ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারি আহত হন।

এ ব্যাপারে তামাবিল স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা শিপন কুমার দাস বলেন, যাত্রীদের তল্লাশির নিয়ম না থাকলেও বিজিবির সদস্যরা জোরপূর্বকভাবে কয়েকজন যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করে। এতে কাস্টমসের লোকজন বাধা দিলে বিজিবির সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালায়। পরে সন্ধ্যার পর পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটে।

বিজিবি-১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিজিবি জওয়ানরা যাত্রীদের তল্লাশি করেন। এটাই তাদের রুটিন ওয়ার্ক। কেননা, চোরাকারবারিরা ভারত থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক নিয়ে আসে। আর সামনে নির্বাচন, তাই সীমান্তে নিরাপত্তা আরো জোরালো করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত থেকে আসা ৩ যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করে ৩ বোতল মদ উদ্ধার করতেই কাস্টমসের লোকজন অফিস থেকে ৫০ গজ দূরে জিরো পয়েন্টে গিয়ে ব্যাগসহ সেসব যাত্রীদের জোরপূর্বক অফিসে নিয়ে ঢুকে পড়ে।

তারা বলে, এটা বিজিবির কাজ না। প্রকাশ্যে বিজিবি জওয়ানদের অপমান করে তারা। এভাবে প্রায়ই বিজিবি জওয়ানদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিরা।

তিনি বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরে শুল্ক স্টেশনে কর্মরতাদের বিজিবির কাছে ক্ষমা চাই বলেন তাদের ঊর্ধ্বতনরা। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার জন্য কালক্ষেপণ করে সন্ধ্যার পর তারা দল বেধে বেরিয়ে আসে এবং স্বল্প সংখ্যক জওয়ান থাকার সুবাদে তাদের ওপর পাথরে ছুড়তে থাকে। এতে বিজিবির এক নারী সদস্যও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অন্ধকারে লাঠি চার্জ করলে ৪/৫ জন আহত হন।

অভিযোগ রয়েছে, শুল্ক স্টেশন দিয়ে ১০ টনের কয়লা-পাথরবাহি গাড়ির ওজন কম দেখানোর। যে কারণে ওয়েট মেশিনও বিকল করে ফেলে রাখেন শুল্ক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। বিভিন্ন সময় যাত্রীরা অবৈধ মালামাল নিয়ে আসলেও তারা অসদ উপায় অবলম্বন করে তাদের ছেড়ে দেন। এমন অভিযোগ অহরহ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, এমনটি জানান স্থানীয়রাও।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১২ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮
এনইউ/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।