জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিরপুর উপজেলা সভাপতি আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিকামী ছাত্রজনতা বর্তমান মাহমুদা চৌধুরী কলেজ রোডের পোস্ট অফিস সংলগ্ন মসজিদে শপথ গ্রহণ করেন।
৩০ মার্চ শেষ রাতে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জিলা স্কুলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু হলে হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে যশোর সেনানিবাসের সাহায্য চায়।
অপর পক্ষে হানাদার বাহিনীর ওই তিন সদস্যও নিহত হয়। শহীদ সিপাহী মহিউদ্দিনের কবরের পাশে মিরপুর উপজেলার শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এর পর ৬৫ জন হানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করে। মিরপুর হানাদারমুক্ত হওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।
দৌলতপুর মুক্ত দিবস
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে (৮ ডিসেম্বর) দৌলতপুরকে শত্রুমুক্ত করে থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়ানো হয়।
দৌলতপুরকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদারদের ছোট-বড় ১৬টি সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এসব যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকশ’ নারী-পুরুষ শহীদ হন। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ সংঘঠিত হয় উপজেলার ধর্মদহ ব্যাংগাড়ী মাঠে। এ যুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিনশ’ হানাদার নিহত হয়। শহীদ হন তিন জন মুক্তিযোদ্ধা ও তিন জন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য।
৮ ডিসেম্বর সকালে আল্লারদর্গায় হানাদাররা দৌলতপুর ত্যাগ করার সময় তাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা রফিক শহীদ হয়। এরপর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী।
ভেড়ামারা মুক্ত দিবস
১৯৭১ সালের এই দিনে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ভেড়ামারাকে শত্রুমুক্ত করা হয়। এই দিন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর আবুল মুনছুরের নেতৃত্বে জেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রাশেদুল আলমের নেতৃত্বে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোর ৭টার সময় ভেড়ামারা ফারাকপুরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা এই যুদ্ধে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধের পর পরই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রায় ৫০/৬০ জন বিহারী নিহত হয়। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে ভেড়ামারায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায়। তারা সন্ধ্যার আগেই ভেড়ামারা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে পালিয়ে যায়। এই দিন রাতে মুক্তিপাগল মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ভেড়ামারায় প্রবেশ করতে থাকে। তখন তারা বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮
আরএ