ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সরিষা’ রাজ্যে প্রজাপতি আর মৌমাছি…

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৮
‘সরিষা’ রাজ্যে প্রজাপতি আর মৌমাছি… ‘সরিষা’ রাজ্যে প্রজাপতি আর মৌমাছি, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: রঙবেরঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষার ক্ষেত। গুণ গুণ শব্দ তুলে উড়ছে মৌমাছি। ক্ষেতের আইলে পা রাখলেই কানে ভেসে আসে সেই শব্দ। হলুদের সম্রাজ্যে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছে মধু। আর এই দলে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গেরও।

দেখে মনে হবে সবাই যেন কনের গায়ে হলুদ মাখাতে ছুটে এসেছে ‘সরিষা’ রাজ্যে। প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া নীলরঙা পাখি, নানা প্রজাতির পোকামাকড়।

এরা সবাই যেন এই রাজ্যের প্রজা। কনের গায়ে হলুদ মাখাতে সবাই ছুটছে হলুদের এই রাজ্যে। যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে গাছের হলুদ ফুলের ওপর। সেখান হলুদ সংগ্রহ করে রাজ্যের প্রজারা ছুটছে সেই কনের বাড়ি। সরিষাক্ষেত, ছবি: আরিফ জাহানবগুড়ার গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শেরপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকটা শুধুই হলুদের সমারোহ। যা দু’চোখের দৃষ্টিসীমাকেও হার মানায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় খণ্ড খণ্ড জমিতে লাগানো হয়েছে সরিষা। আর সেই সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে শোভা ছাড়াচ্ছে। যা প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিটি মানুষকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে।

নিচু জমিতে সরিষার আবাদ তুলনামূলক ভাল হয়। তবে মাঝারি উঁচু জমিতেও সরিষা চাষ করা যায়। অনেক কৃষকই জমি ফেলে রাখার চেয়ে এমন উঁচু জমিতেও সরিষা চাষ করে থাকেন। আবার অনেক কৃষক তুলনামূলক উঁচু জমিতেও সরিষা লাগিয়ে থাকেন।

সরিষা চাষি বকুল হোসেনের যুক্তি বংশ পরম্পরায় কৃষি তাদের একমাত্র ভরসা। কৃষি কাজ করেই চলে তার সংসার। এছাড়া অন্য কোনো পেশাও জানা নেই। এ কারণে অন্য কাজে গিয়ে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেন না। মধু আহরণ করছে মৌমাছি, ছবি: আরিফ জাহানএই কৃষকের ভাষ্য ‘তাই জমি পতিত রেখে লাভ কি। প্রায় বিঘা খানেক উঁচু জমিতেই সারিষা চাষ করেছেন এই কৃষক। গাছও বেশ ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যে সরিষা গাছে ফুলও এসেছে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে ফলনও ভাল হবে’ আশাবাদী কৃষক বকুল হোসেন।

নুরুল ইসলাম, ভোলা সরকারসহ কয়েকজন সরিষা চাষ নিয়ে বাংলানিউজকে বকুল হোসেনের মতোই মত দেন। তারা প্রত্যেকেই কমবেশি জমিতে সরিষা লাগিয়েছেন বলেও জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলার ১২টি উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমি।

শনিবার (৮ ডিসেম্বর) নাগাদ এ জেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বারি-৯, ১৪, ১৫, টোরি-৭ ও সেতি জাতের সরিষা অন্যতম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে জানান, মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী সরিষা চাষ করার উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বরেও সরিষা চাষ করা যায়। এ কারণে জেলার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো সমস্যা হবে না। আর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে এই ফসল প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। প্রজাপতি মধু পান করছে, ছবি: আরিফ জাহানতিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। হেক্টর প্রতি প্রায় এক থেকে দেড় মেট্রিক টন হারে ফলন পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, সরিষা বীজ থেকে উৎপাদিত তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এ তেল চাটনিতেও ব্যবহৃত হয়। শিশুসহ সব বয়সী মানুষের শরীরে সরিষা তেল ব্যবহার করা যায়। এছাড়া এর কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকেন। আর সরিষাবাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খেতে যে মজাদার সে কথাটি ভোজনবিলাসী প্রায় সব মানুষেরই জানা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯ ২০১৮
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।