সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ছুটিতে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। এখানকার সাড়ে তিনশো হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসে কোথাও কোনো কক্ষ ফাঁকা নেই।
হোটেল-মোটেল সূত্র জানায়, এবারের ১৬ ডিসেম্বর বা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি রোববার পড়ায় এর আগের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলে টানা তিন দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশ।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ভ্রমণের জন্য এ সুযোগটি কাজে লাগায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। গত শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে।
জানা গেছে, সমুদ্রের বালিয়াড়িতে (বালির ঢিপিময় বিস্তৃত সমুদ্র) দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা, সৈকতের বালুকা বেলায় ছুটোছুটি আর নোনাজলে সমুদ্র স্নানের অনাবিল আনন্দ যেন পর্যটকদের বারবার কাছে টানে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে।
যে কারণে সারা বছরই পর্যটক থাকে কক্সবাজারে। শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড় বাড়ে আরো বহুগুণ। এ সময় দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। এছাড়া বছরের শেষদিন থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে কক্সবাজারে সমাগম হয় দুই লাখেরও বেশি পর্যটকের।
বড় ভাইয়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থী আতিয়া ওয়াসিমা আতিকা। তিনি বলেন, সমুদ্রের জলরাশির কাছে পৃথিবীর সব সুন্দর যেন ম্লান, আমার কাছে তাই মনে হয়। সমুদ্রের যে মোহনীয় আবেদন আমি মনে করি প্রকৃতিপ্রেমী সব মানুষকে কাছে টানবে। তাই সুযোগ পেলেই সমুদ্রের কাছে ছুটে আসি।
ঢাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রাজীবুল আলম। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে অনেকটা মুগ্ধতার আবেশে তিনি বলেন, কক্সবাজার আমার কাছে অনন্য সাধারণ একটি জায়গা। এখানে না আসলে সমুদ্রের কী মোহনীয়তা তা কেই বুঝতে পারবে না। সবার কাছে আমি আহ্বান জানাবো অন্তত একবার হলেও কক্সবাজার থেকে ঘুরে যান।
চট্টগ্রাম থেকে আসা নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তানিয়া বললেন, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে আসি। অসাধারণ ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের পাশে থেকে যাই।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে এসছেন মো. মিজানুর রহমান। ‘সারা বছরই কাজে ডুবে থাকি। ছুটি পাই না। বছরের ডিসেম্বর মাসে একটা ছুটি পাই, সেই সুযোগটা মিস করতে চাইনি, তাই এখানে ছুটে আসা। অসাধারণ সময় কাটছে। আর এখানকার পরিবেশ তো অসাধারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো। সবমিলে আশা করছি খুব ভালো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবো,’ বললেন তিনি।
এদিকে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো। এখানকার প্রায় সাড়ে তিনশো হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের কোনোটিতেই ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রুম ফাঁকা নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, স্কুল বন্ধ, সন্তানদের পরীক্ষা শেষ। এর মধ্যেই বিজয় দিবস উপলক্ষে টানা তিন দিনের ছুটি। সবমিলে মোটামুটিভাবে এই কদিন পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। আশা করছি প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে।
কক্সবাজার তারকামানের হোটেল দি কক্সটুডে’র পরিচালক ও মালিক সমিতির নেতা মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে পর্যটন শিল্পে একটু নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এই কয়টা দিনে প্রচুর পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন।
‘তারকামানের হোটেল-মোটেলগুলোর প্রায় সবকটির কক্ষ অনেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের বাড়তি সেবা দিতে এসব হোটেল-মোটেল গেস্টহেউসেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’
বিশিষ্ট সাহিত্যিক বিশ্বজিত সেন বাঞ্চু বলেন, সৈকতের বালু চরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অনাবিল আনন্দ তো আছেই, এ কক্সবাজারেই দেখা মেলে পাহাড় সমুদ্রের মেলবন্ধনের অপূর্ব দৃশ্য। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রামুর বৌদ্ধ বিহার, হিমছড়ির ঝর্না, ইনানীর পাথুরে বিচসহ এখানে দেখার আছে অনেক কিছু।
সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি কক্সবাজারের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের ঝাউতলায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিস ওর্য়াল্ডেও এমনই দৃশ্য দেখা গেলো।
টিকিট কাউন্টারের সামনে পর্যটকদের দীর্ঘ সারি। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এই কয়দিন প্রচুর পর্যটক এখানে আসছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকে এখানে। আন্তজার্তিকমানের এই ফিস অ্যাকুরিয়াম দেখে পর্যটকরা বেশ খুশি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, সাগরে মোট ৪৫০ প্রজাতির মাছ আছে। সেখান থেকে আমরা ১৭০ প্রজাতির মাছ এই অ্যাকুরিয়ামে রাখতে সক্ষম হয়েছি। পর্যটকেরাও ইতোমধ্যে জেনে গেছে, এখানে আসলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ সমুদ্রের তলদেশের বিরল জীববৈচিত্র্য দেখতে পাবে। তাই প্রচুর পর্যটক এখন এখানে আসছে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। সমুদ্র সৈকতসহ আশ-পাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা দিতে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফকরুল ইসলাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে শহর এবং সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সমুদ্র সৈকতছাড়াও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্রের দিকে পুলিশের নজরদারি আছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ কেরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
এসবি/এমএ