সম্প্রতি সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের উত্তর কামরাঙ্গা গ্রামের ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার হওয়ার প্রেক্ষিতে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ফাতেমা উত্তর কামরাঙ্গা গ্রামের খান বাড়ির দিনমজুর দুলাল খানের স্ত্রী।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, একই গ্রামের প্রবাসী ফজুল খানের স্ত্রী জাহানারা বেগমের গৃহস্থালীর কাজ করে দিতেন ফাতেমা। ওই সম্পর্কের কারণে নিজ নামে ব্যাংক, সমিতিসহ ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ উঠিয়ে জাহানারাকে ধার দেন ফাতেমা। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে জাহানারা বেগম বাড়িতে তালা লাগিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যান। এতে চাপে পড়ে যান ফাতেমা বেগম। তারপর গত ১০ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে ফজুল খানের বাড়ির রান্না ঘরে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তবে তার পরিবারের অভিযোগ, ঋণের টাকা পরিশোধে সহযোগিতার নামে বশির ও আলমগীর নামে দুই ব্যক্তির প্ররোচণা ও মানসিক নির্যাতনের কারণে ফাতেমা আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় জাহানারা বেগম, বশির ও আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর থেকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আসামি ও প্রভাবশালীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের।
ফাতেমার দেবরের স্ত্রী মাকছুদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ফাতেমার স্বামী দুলাল খুবই সহজ সরল। দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ সংসার চালাতে গিয়ে ফাতেমা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতেন। সেই সুবাদে পাশের বাড়ির প্রবাসী ফজুল খানের বাসায়ও কাজ করতেন। তার স্ত্রী জাহানারা বেগম স্থানীয় সমিতি ও ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ঋণ তুলে আর দিতে পারেননি। নতুন করে ফাতেমাকে দিয়েও ঋণ তুলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। জাহানারা বেগম একই বাড়ির রোকেয়ার কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, শামসুন্নাহারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও মমতাজ বেগমের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। স্থানীয় আরও অনেকের কাছ থেকে ধার নিয়ে পালিয়ে গেছেন তিনি।
মাকছুদা বেগম আরও বলেন, জাহানারার জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা শোধ করতে ফাতেমা একই বাড়ির বশির উল্যাহ ও আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু তারা ওই টাকা ফেরত না নিয়ে ফাতেমাদের জমি বিক্রি করার জন্য চাপ দেন এবং জমি না দিলে তার বিপদ হবে বলে হুমকি দেন। বশির ও আলমগীর পল্লী বিদ্যুতের ‘মধ্যস্থতাকারী’ এবং এলাকায় সালিশ-বৈঠক করেন বলে এলাকায় তাদের অনেক প্রভাব। এই প্রভাবের কারণে ফাতেমা কাউকে কিছু বলতে পারছিলেন না। তবে তার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে তারা দুইজনেই পলাতক রয়েছেন।
ফাতেমার স্বামী দুলাল খান বাংলানিউজকে বলেন, বশির ও আলমগীরের হুমকির কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারছি না। অন্যের ঘরে তিন সন্তান নিয়ে থাকতে হচ্ছে। থানা পুলিশকে এ বিষয়ে জানানো হলেও তারা ঘটনাটি ‘মীমাংসা’ করে দেবে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন পাটওয়ারীর সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি হয়নি। বাদী পক্ষকে কেউ হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকলে তাদের থানায় আসতে বলেন। আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
এনটি/এইচএ/