ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মফস্বল সাংবাদিকতার স্মরণীয় নাম মোনাজাতউদ্দিন 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
মফস্বল সাংবাদিকতার স্মরণীয় নাম মোনাজাতউদ্দিন  মোনাজাতউদ্দিন, প্রতীকী ছবি

ফেনী: মোনাজাতউদ্দিন বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিকতা জগতের একটি স্মরণীয় নাম। তিনি শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না, নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণার বিষয়বস্তু। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ডেস্কে বসে নাগরিক সাংবাদিকতা নয়, তিনি ছিলেন তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের সংবাদকর্মী, ছিলেন আপামর জনসাধারণের মুখপাত্র। 

শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বাংলার চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৫ সালের এ দিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের কালা সোনাচরের কাছে শেরেবাংলা ফেরি থেকে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মফস্বলের হাজারও সংবাদকর্মীর প্রেরণার উৎস হয়ে হৃদ মাজারে থাকবেন তিনি। খবরের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা খবর, তথ্যানুসন্ধান ও রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে মোনাজাতউদ্দিন নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন সাংবাদিকতার ইতিহাসে। গ্রামের মেঠো পথে ঘুরে ঘুরে এ তথ্যানুসন্ধানী সংবাদকর্মী তার সাংবাদিক জীবনে করেছেন নানা ধরণের অসাধারণ সব রিপোর্ট। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সব ঘটনা। তিনি তার কর্মের মাধ্যমেই অমর হয়ে থাকবেন প্রান্তিক জনপদের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক।  তৎকালীন সময়ে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় কাজ করতেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করে নিয়েছেন ১৯৯৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর), ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে রংপুর নাট্য সমিতি কর্তৃক সংবর্ধনা, ১৯৮৪ সালে পান সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক, ১৯৮৫ সালে আলোর সন্ধানে পত্রিকার সংবর্ধনা, ১৯৮৬ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বগুড়া কর্তৃক সম্মাননা সার্টিফিকেট, ১৯৮৭ সালে সংবাদপত্রে প্রভূত অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে রংপুর পদাতিক গোষ্ঠীর গুণীজন সংবর্ধনা, বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার পান ১৯৯০ সালে, একই সালে লেখনীর মাধ্যমে প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে প্রত্যক্ষ ও জনপ্রিয় করার দুরূহ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সমাজ ও প্রযুক্তি বিষয়ক পত্রিকা ‘কারিগর’ সম্মাননা, ১৯৯৫ সালে মর্যাদাশালী অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন।

এছাড়া তিনি আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তবে মোনাজাত উদ্দিন এ পুরস্কারের চাইতেও বড় পুরস্কার মনে করতেন মানুষের স্নেহ-শ্রদ্ধা ও ভালবাসাকে, যা তিনি আমৃত্যুই পেয়েছেন।

৬০-এর দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ঘটে তার। কর্ম-জীবনে পরবর্তীতে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ ও সর্বশেষে দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন। তার সংবাদ ক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠো পথ, পিছিয়ে পড়া জনপদ। গ্রাম থেকে গ্রামের পথে হেটে দীর্ঘ জীবনে সঞ্চয় করেছেন অনেক অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছিলেন ১১টি বই।

দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন দৈনিক সংবাদে, সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন ‘দৈনিক রংপুর’ পত্রিকার। আজকের এইদিনে মহান এ মানুষকে স্মরণ করবে মফস্বল এবং শহরের হাজারও সংবাদকর্মী। যারা মোনাজাতউদ্দিনের রেখে যাওয়া কর্ম থেকে প্রতিনিয়তই শিখছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
এসএইচডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।