ঘন কুয়াশার বৃত্ত ছেদ করে শনিবার সকাল ৯টার পর দেখা মিলে সূর্যের। তারপর মিষ্টি সোনালি রোদে ঝলমলে হয়ে ওঠে চারিদিক।
কারণ পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে এদিন তাপমাত্রা আরও কমেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে রাজশাহীতে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মওসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গতকাল শুক্রবার ছিল ৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তাপমাত্রা কমছেই!
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বাংলানিউজকে জানান, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান প্রতিদিনই কমছে। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এছাড়া আজ ভোর ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ এবং সকাল ৯টায় ৮২ শতাংশ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে জানান, পূর্বাভাস ছিল ডিসেম্বরের শেষার্ধে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু (৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে বর্তমানে তীব্র (৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এছাড়া মাসের শেষে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে, রাজশাহী মহানগরীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসায় দুর্ভোগ বেড়ছে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন তারা। ভোরে ও সন্ধ্যার পর এ মানুষগুলোকে পথের ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। তবে এরই মধ্যে সেবরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণও শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কোল্ড ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক।
অপরদিকে, বাড়তি শীত নিয়ে শঙ্কা কাটছেনা এ অঞ্চলের কৃষকদেরও। এ বছর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় বোরো বীজতলার কোল্ড ইঞ্জুরি, আলুর লেট ব্লাইটসহ ডাল ফসলে নানান শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। তবে এ জন্য কৃষকদের স্থানীয়ভাবে নিকস্থ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি।
মাঠে থাকা শীতকালীন আবাদসহ যে কোনো কৃষি পরামর্শ প্রদানের জন্য এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস.এম. আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, শীত মোকাবেলায় এবারও জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলার জন্য ৩৭ হাজার ৮০০ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহানগর এলাকার জন্য ১০ হাজার কম্বল দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮
এসএস/এমজেএফ