ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাধীনতার পর প্রথমবার মন্ত্রীবিহীন সিরাজগঞ্জ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৯
স্বাধীনতার পর প্রথমবার মন্ত্রীবিহীন সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ: স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো মন্ত্রী পাচ্ছে না সিরাজগঞ্জবাসী। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার, ১৯৭২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারেও মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজগঞ্জের নেতারা। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারই মন্ত্রী নেই সিরাজগঞ্জে।

মন্ত্রিপরিষদে নাম নেই জেলার কোনো সংসদ সদস্যদের (এমপি)। রোববার (০৬ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে নাম ঘোষণার সময় আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল সিরাজগঞ্জবাসী।

তবে মন্ত্রীর তালিকায় সিরাজগঞ্জের কোনো নেতার নাম না থাকায় হতাশ এখানকার আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা। দিনভর পুরো সিরাজগঞ্জজুড়ে ছিল এটাই আলোচিত বিষয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতাশা প্রকাশ করেন অনেকে।

জেলার রাজনৈতিক সচেতনরা বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ এম মনসুর আলী। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি। ওই সময়ে বেলকুচি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন তালুকদারও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলেও মন্ত্রিত্ব পান ডা. এম এ মতিন। পরবর্তীতে এরশাদ আমলেও মন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।  

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন থেকে নির্বাচিত আনছার আলী সিদ্দিকী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পরে স্বরাষ্ট্র এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। একই সরকারে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হাসিবুর রহমান স্বপন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।  

২০০৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নিযুক্ত হন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ওই সরকারে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ট উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এইচ টি ইমাম। ২০১৪ সালে মহাজোট সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বিপুল বিজয়ের পুরস্কার হিসেবে অন্তত একজন মন্ত্রী পাবেন এমনটাই আশা ছিল নেতাকর্মী ছাড়াও সিরাজগঞ্জবাসীর।

কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে টেলিভিশনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নামের তালিকা দেখে। উৎসুক জনতা দিনভর টিভি সেটের সামনে এবং মোবাইলে অনলাইন নিউজ দেখতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে সিরাজগঞ্জের কারও নাম না থাকায় হতাশ হন দলের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, যুবলীগ নেতা আল-আমিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই বাংলানিউজকে বলেন, ধারণা ছিল জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম আবারও মন্ত্রী পাবেন। পাশাপাশি জেলার বাকি পাঁচটি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেখা যাবে এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু ঘোষিত মন্ত্রিপরিষদে সিরাজগঞ্জের কারও নাম না থাকায় আমরা আশাহত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি এ জেলায় অন্তত একজন মন্ত্রী দেওয়া হোক।

সিরাজগঞ্জ জেলা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও স্থানীয় কলম সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে প্রতিটি সরকারের আমলে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমনকি এ জেলা থেকে প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীও দেওয়া হয়েছিল। এবার মন্ত্রিত্ব না থাকায় জেলাবাসী হতাশ। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিছুটা হলেও ধীরগতি হবে।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো মন্ত্রী বঞ্চিত হলো সিরাজগঞ্জবাসী। এতে আমাদের মাঝে হতাশা থাকলেও নেত্রীর প্রতি আস্থা রয়েছে। মন্ত্রী না থাকলেও জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক গতিতেই এগোবে বলে তিনি দাবি করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৯
জিপি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।