ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে তাকে দেওয়া বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রোববার (০৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনে আয়োজিত এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ছাড়াও নবনিযুক্ত মন্ত্রীবর্গ, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ রাজনীতিক, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন>>বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ: শ্রিংলা
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ বিদায় সংবর্ধনায় বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিদায়ী হাইকমিশনার শ্রিংলা।
দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে হাইকমিশনের প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়ায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
শ্রিংলা বলেন, অকৃত্রিম বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে ভারত দেখতে চায় উন্নত, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ এক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছি, তবে এখানকার মানুষ চিরদিন আমার হৃদয়ে অবস্থান করবে। ’
ভারতের বিদায়ী এই হাইকমিশনার বলেন, ‘আমি আমার মেয়াদের তিন বছরে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা পরিদর্শন করেছি। আমি দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত উদার, পরিশ্রমী এবং সহযোগিতাপূর্ণ। সব সময়ই আমার মনে হয়েছে আমি আমার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছি। তাই এ দেশ ছেড়ে যাওয়াটা আমার কাছে যেন নিজ বাড়ি ছেড়ে যাওয়া। ’
ভারতের এই দূত এ সময় নিঃশর্ত সহযোগিতা এবং দুই দেশের বন্ধন জোরদারে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনারের পত্নী হেমাল শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতি যে ঔদার্য দেখিয়েছেন এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, ‘আমি কখনো এমন আদর ও ভালোবাসা কোনো দেশ থেকে পাইনি, যা বাংলাদেশ থেকে পেয়েছি। ’ তিনি বলেন, তার দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তাই এখানে তিনি নিজের বাড়ির মতোই অবস্থান করেছেন। হেমাল শ্রিংলা বলেন, ‘আমি কখনই বাংলাদেশের আতিথেয়তার কথা ভুলব না। ’
বাংলাদেশে তিন বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল বিদায় নেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শ্রিংলা আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার প্রচেষ্টায় দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায় এবং সোনালি যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক।
এ সময় সীমান্ত বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অবকাঠামো ও ব্যবসা খাতে দুই দেশের বিনিয়োগ বেড়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ানো শ্রিংলার সময়ই দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর সম্পন্ন হয়েছে।
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফর করেন। তিন বছরে দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ১০টি বৈঠক, ছয়টি ভিডিও কনফারেন্স ও পাঁচবার টেলিফোনে আলাপ হয়েছে।
১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প যৌথভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৯৪৭ সাল থেকে জিইয়ে থাকা দুই দেশের স্থল ও সমুদ্রসীমা মীমাংসা হয়েছে। এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে ৯০টি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
শ্রিংলার আমলেই ভারতের অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের নেপথ্যে কাজ করেছেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
এদিকে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার স্থলে বাংলাদেশে পরবর্তী ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের (আইসিসিআর) মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিক রিভা গাঙ্গুলি দাস। তিনি শিগগিরই দায়িত্ব বুঝে নেবেন বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৯
এমএ/