পৃথিবী থেকে কিছু সূর্যালোক প্রতিফলিত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি প্রশমনে সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা ভূ-প্রকৌশল ব্যবহার একটি অবিসংবাদিত ধারণা। তত্ত্বানুসারে, উপরের বায়ুমণ্ডলে কিছু প্রতিফলিত কণা ছড়িয়ে অল্প পরিমাণ সূর্যালোককে রোধ করে হয়তো পৃথিবীকে শীতল করা সম্ভব।
এই গবেষণা দলে রয়েছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা; যারা কলেরা, পরিবেশবিদ, জলবায়ু এবং রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ। গবেষণার ফলাফল ২০২০ সালে প্রকাশিত হবে। এই গবেষণা প্রকল্প মোট আটটি ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড ইম্প্যাক্টস মডেলিং অ্যানলাইসিস ফর এসআরএম (ডিসিম্যালস) ফান্ড প্রকল্পের অন্যতম।
আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই প্রকল্পের আওতায় প্রথমে সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা ভূ-প্রকৌশল কিভাবে কলেরা ও ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাবকে প্রভাবিত করবে তার কম্পিউটার মডেলিং ও সিমুলেশন করা হবে। যদিও ম্যালেরিয়া রোগটি ক্রান্তীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এটি দেখা গেছে যে, এই রোগ শীতল তাপমাত্রায় সর্বোত্তম সঞ্চালিত হয়। সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করার উদ্দেশ্য যদি হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলকে শীতলকরণ, তবে তার কারণে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। আবার এসআরএম যদি তাপমাত্রা ও বন্যা হ্রাস করতে পারে তবে তা কলেরার প্রাদুর্ভাব কমাবে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ধারণার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য উপকার বা অপকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। তাই এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার মডেলিং এবং সিমুলেশনের মাধ্যমে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে প্রামাণিক ধারণা পাওয়া যাবে। সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আলোচনা এবং কার্যক্রমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই দেশগুলো পরিবেশগত পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবগুলোর জন্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা ব্যবহৃত হলে তাদের সুফল বা কুফল ভোগ করতে হতে পারে।
অন্যদিকে উন্নত বিশ্ব এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণা করে থাকে। ডিসিম্যালস প্রকল্পের মাধ্যমে আইসিডিডিআর,বি আর্জেন্টিনা, বেনিন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, আইভরি কোস্ট, জ্যামাইকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা মডেলিং বিশেষজ্ঞদের সাথে ২০২০ সালের শেষে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করবে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। ডিসিম্যালস ফান্ডটি সোলার রেডিয়েশন ম্যনেজমেন্ট গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভ (এসআরএমজিআই) নামে একটি বেসরকারি প্রকল্প। যা ২০১০ সালে এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড, দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সেস (টিডব্লিউএএস) এবং রয়েল সোসাইটি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।
এ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক আইসিডিডিআর,বি’র ইমার্জিং ইনফেকশন অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি ল্যাবরেটরির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুব গভীরভাবে গবেষণা করে দেখা হয়নি। অন্যদিকে, সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনার ভূ-প্রকৌশল ২১ শতকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার একটি অন্যতম আলোচিত বিষয়। তবে এর সম্ভাব্য ফলাফল এখনও অজানা। সৌর ভূ-প্রকৌশল বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে দুটি নির্দিষ্ট রোগ - কলেরা ও ম্যালেরিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে তা নিরূপণ করার জন্য আমরা একটি কম্পিউটার মডেলিং তৈরি করবো। এক্ষেত্রে পূর্বে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং প্রাসঙ্গিক মডেল পর্যবেক্ষণ করব। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জলবায়ু ও মানব স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মহৎ লক্ষ্য নিয়ে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে।
এসআরএমজিআই’র পরিচালক অ্যান্ডি পার্কার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশকে সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা কিভাবে প্রভাবিত করবে তা গবেষণা করবেন ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ও তার দল। এ বিষয়ে ডিসিম্যালস ফান্ড তাদের সহায়তা করতে পারছে বলে আমি সত্যিই গর্বিত। বাংলাদেশের প্রথম সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে আমাদের আরো শিখাবে কিভাবে কলেরা ও ম্যালেরিয়া সৌর বিকিরণ ব্যবস্থাপনার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং বাংলাদেশে এ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত একটি বৃহৎ পরিসরের আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবে।
বাংলাদেশ সময়: ৮০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
এমএএম/এমজেএফ