ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিআরটিসিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে: কাদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
বিআরটিসিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে: কাদের মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনে মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিআরটিসি’র অতীত খুব এটা সুখকর নয়। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধেছে। কোন কর্মকর্তা কত টাকা বেতন পান, কোথা থেকে কত টাকা আসে সব আমি জানি।

ফের একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজধানীর মতিঝিল বিআরটিসি ভবনে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।  

মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে অনুষ্ঠিত ওই মত বিনিময় সভায় করপোরেশনের চেয়ারম্যানসহ বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিআরটিসি’র বহরে নতুন আরো ১১০০টি গাড়ি যুক্ত হচ্ছে। এরমধ্যে ৩০০ ডাবল ডেকার (দ্বিতল বাস), ৩০০ সিঙ্গেল ডেকার বাস রয়েছে। এসব বাসের মধ্যে ২০০টি এসি এবং ১০০টি নন এসি। এছাড়া ৫০০টি ট্রাকও যুক্ত হবে।

এপ্রিল মাসের মধ্যেই এসব গাড়ি চলে আসবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে কিছু গাড়ি গাজীপুরে চলে এসেছে, কিছু গাড়ি দু’একদিনের মধ্যেই সীমান্তে চলে আসবে। তবে আগামী এপ্রিলের মধ্যেই সবগুলো গাড়ি চলে আসবে। নতুন গাড়ি, নতুন রুটে যাবে।

আরও পড়ুন>> বিএনপি কাদায় আটকে পড়া গরুর গাড়ি: কাদের 

তিনি বলেন, বিআরটিসি’র মধ্যে খুব একটা সুনামের বিষয় নেই। এখানে অনিয়ম- দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। নতুন গাড়ি আসবে। এতে জনগণ বিশেষ করে গণপরিবহনের সংকট দূর হবে। জনগণের জন্য সেটা স্বস্তির খবর, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এর আগেও গাড়ি এসেছে, এইসব গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাজে অবস্থায় রয়েছে। নতুন গাড়ি আসছে, মানুষ স্বস্তি পাবে, নতুন আশা। কিন্তু এই গাড়িগুলো কতদিন টেকসই হবে এ নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতি যদি তাদের ভালোবাসা না থাকে, তাহলে দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে, তা ভাবার কোন কারণ নেই। অনেকে নিজেদের পকেটের উন্নয়নে বিআরটিসি-কে ব্যবহার করেন। কিন্তু বিআরটিসি’র উন্নয়ন হয় না।
 
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ইঙ্গিত দিয়ে কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, এই নগরীতে। হঠাৎ একটা বিআরটিসি বাসে যখন আমি উঠি, তখন দেখি সিটে ছাল-বাকল উঠে গেছে। এসি কাজ করে না। এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। বাইরে গাড়ির দিকে তাকানো যায় না’।

মন্ত্রী বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে সরকার গাড়ি আনলো, দেশের মানুষ সুফল কি পেলো সেটা আজকে ভাবার বিষয়। বারে বারে লোকসান দিয়ে বিআরটিসি আর কত চলবে? অত্যাধুনিক গাড়ি আসবে, কিছুদিন পর দেখা গেলো এই গাড়ি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে, বডি খুলে খুলে পড়ছে, জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে, কেন এমন হয়?

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে আছেন, কার কত ইনকাম (আয়), আমি ভালো করে জানি। কিভাবে ইনকাম হয় তাও জানি। আপনাদের উন্নতি হয়, কিন্তু বিআরটিসি’র উন্নতি হয় না।

সঠিক ব্যক্তির হাতে নতুন গাড়ির দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিআরটিসি’র গাড়িগুলো মেরামতের অভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকালে নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই আনন্দের খবর, নতুন গাড়ি আসছে। কিন্তু এই গাড়িগুলো ম্যানেজমেন্ট, রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে হবে? কারা এই গাড়িগুলো চালাবে? এটা এখন থেকে ঠিক করতে হবে। সঠিক ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব না পড়লে বিআরটিসি’র আগের পরিণতি-ই হবে।  

বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যেসব গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় লিজ দেওয়া আছে সেগুলোর হিসাব দিতে হবে। কার কাছে কত বছর ধরে কতটি গাড়ি আছে, কিসের বিনিময়ে আছে, এগুলো জানা দরকার। তা না হলে কোটি কোটি ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি এনে জনস্বার্থের কোন উপকার হবে না।  

নতুন ১১শ’ গাড়ির পরিণতি যেন এর আগের আমদানি করা গাড়ির মতো না হয় এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার পরামর্শও দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
এসএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।