একেতো আত্মীয়-স্বজন ও দেশের মায়া ছেড়ে যাচ্ছিলেন। এখন দু’টি মরদেহ সামনে রেখে কী করে প্লেনে যাবেন রুবেল? এমন মর্মান্তিক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দিশেহারা হয়ে যান রুবেল।
এর আগে কাঁদতে কাঁদতে বাংলানিউজকে রুবেল বলছিলেন, আমাকে বিদায় জানাতে এসে আমার আদরের ছোট ভাই ও ছোট বোনের স্বামী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। তাদের মরদেহ রেখে আমি কীভাবে বিদেশে যাবো। আমি বিদেশে যাবো না। সব বাদ। ওদের জানাজায় অংশ নেবো। নিজের হাতে তাদের দাফন করবো।
পরে অনেক বুঝিয়ে সোমবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে প্লেনে পাঠান তার স্বজনরা। চোখের সামনে ঘনিষ্ঠ জনের দু’টি মরদেহ রেখেই তাকে যেতো হলো সৌদিতে।
রোববার (২৭ জানুয়ারি) দিনগত রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় ট্রাকচাপায় মারা যান রুবেলের ছোট ভাই ডালিম (২০) ও ভগ্নিপতি মোবারক হোসেন (৩০)।
রুবেলের মামা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার দুপুরে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট ছিল রুবেলের। তাই রুবেলকে বিদায় দিতে রোববার রাতে তার সঙ্গে বিমানবন্দরের উদ্দেশে এসেছিল ডালিম ও মোবারক। পরে তারা উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে রুম নিয়েছিল। সেসময় রুবেলকে হোটেলে রেখে শ্যালক-দুলাভাই (ডালিম ও মোবারক) বাইরে বের হয়েছিল ঘুরতে। তখন বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাত ১টায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় দু’জন। তাদের এ সংবাদ জানাজানি হলে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। দিশেহারা হয়ে যায় রুবেল এবং স্বামী-ভাই হারানো তার সদ্য বিয়ে হওয়া ছোট বোনটি। এদের মা-বাবাও ঘটনাটি মেনে নিতে পারছিল না, কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। তারপর আর রুবেল বিদেশ যেতে চাইছিল না। অনেক বোঝানোর পর বাকরুদ্ধ অবস্থায় আজ সে দেশ ছেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা ছিল তিন ভাই, এক বোন। ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল ডালিম। বড় রুবেল। মেজটা আব্দুল মান্নান সোরহাব সৌদিতেই থাকে। একটি মাত্র বোন, হোসনে আরা শাবনুর। ১৮দিন আগে তার বিয়ে হয় মোবারকের সঙ্গে। এ কষ্ট আমিই মেনে নিতে পারছি না, তারা কী করে নেবে। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ডালিম ও মোবারকের ময়ানতদন্ত সম্পন্ন করেন বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। এর আগে বিমানবন্দর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শ্রীদাম চন্দ্র রায় মরদেহগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। মরদেহ দু’টি অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায় নিয়ে যান স্বজনরা।
রায়পুরার আনোয়ারবাদ গ্রামের আতর মিয়ার ছেলে ডালিম। আর একই উপজেলার মামুদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মোবারক।
নিহত মোবারকের ছোট ভাই জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মোবারক রায়পুরায় একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। ভাইটিকে মাত্র ১৮ দিন আগে বিয়ে করিয়েছি। এটা মেনে নিতে পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না ভাই নেই আমাদের মাঝে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাকচাপায় দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় চালক সাহিন (৩০) ও হেলপার লিমুকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, দুর্ঘটনার সময় দ্রুতগতির ট্রাকটি ব্রেক ফেল করেছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
এজেডএস/টিএ