বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ৫শ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।
চলতি অর্থবছরে আরও দুই হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ জনের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে কেউ নিজেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা অবহেলিত ভাবলে চলবে না। সবাইকে ভাবতে হবে এই দেশের নাগরিক এবং প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী-নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে। আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই এবং এটা নিশ্চিত করবো- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শুধু তা নয়, এছাড়া আমাদের দলিত শ্রেণী, হিজড়া, চা শ্রমিক; দেশের সব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাবলম্বিতা অর্জন, সেই সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, শিক্ষায়-দীক্ষায়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের সব জনগোষ্ঠী যেন সমান সুযোগ-সুবিধা পায়, কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, তাদের সংস্কৃতির বিকাশ, শিক্ষার প্রসারসহ সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য আমাদের সব জনগোষ্ঠী সমান সুযোগ পায়, কেউ যেন অহেলিত না থাকে। কেউ যেন দূরে পড়ে না থাকে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিশেষভাবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। যার ফলে আজ এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান।
বৃত্তিপ্রাপ্ত সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা স্বকীয় পোশাক পরে অনুষ্ঠানে আসায় তাদের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খুব ভালো লাগলো, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে সুন্দরভাবে এসেছে। এটা খুবই সুন্দর লেগেছে। খুবই ভালো লেগেছে।
নিজস্ব ঐতিহ্য চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজের প্রয়োজনে মানুষ পোশাক পরবে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নিজের সংস্কৃতি, নিজস্ব স্বকীয়তাটা সেটাও মাঝে মাঝে প্রকাশ করা প্রয়োজন। তাতে মানুষ দেখতে পারে, আমাদের বৈচিত্র্যটা কত চমৎকার?
উপস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যার যার পেশা, সেই পেশাটা ছেড়ে দিলে চলবে না। সেই পেশাটাকেও ধরে রাখতে হবে এবং সেটাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই যেন আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে সেদিকে তোমাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে- সেটাই আমি চাই।
শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই চাই, শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে সবাই রাষ্ট্র পরিচালনায় আসবে। দেশটা আমাদের, এই কথাটা সবাইকে মনে রেখে যার যার ক্ষেত্রে সবাই কাজ করে যাবে। এখন যারা উপস্থিত, তাদের কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, মেডিকেলে পড়ছে বিভিন্ন সাবজেক্টের উপরে উচ্চতর পড়াশোনা করছে, তারাই একদিন দেশ গড়ার কাজে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান।
সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী এ্যা ম্যাট। তিনি শিক্ষা বৃত্তিসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে আন্তরিকতা ও বিভিন্ন কার্যাক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৯
এমইউএম/এএ