ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নার্সিং কাউন্সিলের ডে. রেজিস্ট্রার হচ্ছেন আলোচিত সেই রাশিদা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
নার্সিং কাউন্সিলের ডে. রেজিস্ট্রার হচ্ছেন আলোচিত সেই রাশিদা

ঢাকা: নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে দু’টি এবং মানবপাচারের অভিযোগে দু’টিসহ মোট চারটি মামলায় জড়ানো এক কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নার্সিং কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে পুনঃনিয়োগের চেষ্টা চলছে।

এর আগে ওই কর্মকর্তা নার্সিং কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। সম্প্রতি আদালত থেকে এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় তিনি আগের পদ (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) ফিরে পেতে বর্তমান রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন।

যা সরকারি চাকরির নিয়মবহির্ভূত।

এছাড়া কাউন্সিলের বর্তমান রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগমের চাকরির মেয়াদ শেষের দিকে থাকায় একই সঙ্গে তিনি রেজিস্ট্রার হওয়ার জন্যও মন্ত্রণালয়ে তদবির শুরু করেছেন। আর এসবই তিনি করছেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ওই কর্মকর্তার নাম রাশিদা আক্তার। তিনি বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। কিন্তু নারী, শিশু নির্যাতন ও মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে চারমাস কারাবরণ করেছেন। পরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এর আগে হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সেখান থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নার্সিং পেশায় কর্মরতরা জানান, এমন একজন ব্যক্তিকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা দেখতে চান না। যিনি নার্সিং শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন দেবেন তাকে অবশ্যই স্বচ্ছ ও অভিযোগমুক্ত হতে হবে। তাছাড়া সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুসারে সে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে পুনরায় বহাল হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (নার্সিং) ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাজা ভোগ করেন তাহলে তিনি এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যাতা হারিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাশিদা আক্তারের বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা (মামলা নম্বর- ২৯) করা হয়। একই বছর পহেলা ডিসেম্বর আবারো একই অভিযোগের ভিত্তিতে খুলনা সদর থানায় তাকে আসামি করে মামলা (মামলা নম্বর-০২) করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলার পাইকগাছা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নম্বর-০৫) করা হয়। একই বছরে ২ মার্চ একই আইনে পুনরায় রাশিদা আক্তারকে আসামি করে খুলনার রূপসা থানায় মামলা (মামলা নম্বর-০৫) করা হয়। এসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

তবে দেখা যায়, প্রতিটি মামলার রায়ে মামলার সাক্ষী ও কোনো ক্ষেত্রে এজাহারকারীদের অনুপস্থিত থাকার কারণে আদালত তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আর এ সুযোগটিই তিনি কাজে লাগাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন।

নার্সিং কাউন্সিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, রেজিস্ট্রারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন সৎ ও যোগ্যব্যক্তি অধিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। এখানে চারটি মামলায় জড়ানো কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তা সমীচীন হবে না।  

এসব বিষয় নার্সিং কাউন্সিলে জানাজানি হওয়ায় অভিযুক্ত রাশিদা আক্তার তার বিরুদ্ধের সব ফৌজদারি মামলা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে রাশিদা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়। যারা মেধা ও যোগ্যতায় তাকে ধরতে পারবে না, তারাই এসব অভিযোগ ছাড়াচ্ছে।

সামগ্রিক বিষয়ে নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, রাশিদা আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সম্পর্কে তিনি শুনেছেন।  

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এমএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।