ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাতে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারায় কৃষক!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
রাতে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারায় কৃষক!

লালমনিরহাট: দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট চরম পর্যায়ে। চলমান অবস্থায় চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে রাতে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাত ৮টায় আদিতমারীর উত্তরপাড়ার চাষি আনছার আলীকে তার নিজের পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারা দিতে দেখা যায়।

প্রতিবেশী দেশ ভারত হঠাৎ করেই রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের।

ফলে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা কেজি দরে। যা নিয়ে দেশে রীতিমতো হৈ চৈ পড়েছে। বাজার-বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংসদেও আলোচনার ঝড় উঠেছে পেঁয়াজ নিয়ে।

বর্তমানে আকাশছোঁয়া দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। তবে বাজারে দাম ভালো থাকলেও কৃষকদের পেঁয়াজ বাজারে আসার প্রাক্কালে কমে যাওয়া নিয়ে বেশ শঙ্কিত জেলার চাষিরা।

আদিতমারী উত্তরপাড়া গ্রামের চাষি আনছার আলী (৬৫) বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ সংকট দেখা দেওয়ায় দামের এই অবস্থা। আমার ২৭ শতাংশ জমির পেঁয়াজ পরিপক্ক হয়েছে। চোরেরা চুরি করতে পারে সন্দেহে সন্ধ্যার পর থেকেই নিজের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি।  

‘এছাড়া দাম বেশি থাকায় ক্ষেতের বড় বড় গাছের পেঁয়াজ তুলে নিয়ে রোববার সকালে লালমনিরহাট শহরে নিয়ে গেছি। প্রায় ৬০ কেজির মতো পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৩৩ টাকা দরে বিক্রি করেছি। দেড় মণ পেঁয়াজ আট হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। পেঁয়াজ চাষ করে জীবনে এই প্রথম এত দাম পেলাম। দীর্ঘদিনের পেঁয়াজের লোকসান এবার উঠে আসবে। ’

ওমর কাজি মাদ্রাসা এলাকার চাষি আব্দুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, এক হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজের বীজ কিনে ২০ শতাংশ জমিতে ২৫ কেজি রোপন করেছি। আগাম জাতের হলেও রোপন করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবুও ডিসেম্বর মাসে বাজারে বিক্রি করা যাবে। বিগত কয়েক বছর আমদানির কারণে পেঁয়াজ চাষে লোকসান হওয়ায় চাষ কমে গেছে। পেঁয়াজ মৌসুমে আমদানি না করলে চাষিরা লাভবান হবে।  

এদিকে জেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলমান সংকট মোকাবিলায় কিছু চাষি অপরিপক্ক পেঁয়াজ গাছসহ বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে একমুঠো পেঁয়াজসহ গাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা দরে। অনেকেই এসব পেঁয়াজ কিনছেন। এলাকার চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর মাসে ব্যাপকভাবে আসলেই পেঁয়াজের বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাংলানিউজকে জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫০ একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। যা বাজারে বিক্রিও শুরু করেছেন চাষিরা। তবে নভেম্বরের শেষ দিকে ব্যাপকহারে বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষন রায় বাংলানিউজকে বলেন, স্বল্প পরিমাণে হলেও স্থানীয় চাষিদের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের প্রথমে ব্যাপকহারে বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।  

চাহিদা থাকায় এবার পেঁয়াজ চাষিরা বেশ লাভবান হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।