ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘হাওরাঞ্চলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সময় হয়েছে’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
‘হাওরাঞ্চলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সময় হয়েছে’

ঢাকা: হাওর অঞ্চলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। 

বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি’ (আইডিপি) আয়োজিত ‘হাওর উন্নয়নে সমন্বিত প্রয়াস’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। সভার সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্‌।

 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলে দারিদ্র্যের মূল কারণ অবিচার ও বৈষম্য। তথাকথিত প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজরা অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে আসছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে।

হাওর অঞ্চলের প্রকট দারিদ্র্য নির্মূল কোনো একক কর্মসূচির বিষয় নয় উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান এম এ মান্নান।  

সভায় ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলে একক ও সামগ্রিক কর্মকৌশল বাস্তবায়নকল্পে ৩ হাজার ৫৫০ নারীর পরিচালনায় গরে তোলা হয় গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টি ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ সেবাসহ নানান তথ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের হাওরবাসীকে। বর্তমানে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সুনামগঞ্জের দিরাই, কিশোরগঞ্জের ইটনা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার ৯ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।  

ব্রাক জানায়, পূর্বে এসব হাওর অঞ্চলের মাত্র ১০ শতাংশ পরিবার বিভিন্ন ধরনের সেবার আওতাভুক্ত ছিল। আইডিপির কর্মসূচির মাধ্যমে তা ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় থাকা ৯৬ শতাংশ নারী অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটিয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। কর্মস্থলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ১৭ শতাংশ থেকে উন্নীত হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশে। এছাড়া এর মাধ্যমে ৪৭ হাজার ৫২৪ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত ও ৯০ শতাংশ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি, এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা উন্নত মানের বীজ, বসতভিটায় জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ, গবাদিপশুর টিকাদান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবাসহ তথ্য সেবা পেয়ে থাকে।  

মতবিনিময় সভার পর ‘হাওরে সমন্বিত উন্নয়ন: ভবিষ্যতের রূপকল্প’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ’র পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন- বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আলী মুহম্মদ ওমর ফারুক, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিন্‌জ,  কেয়ার বাংলাদেশ’র সৌহার্দ্য ৩-এর চিফ অব পার্টি ওয়ালটার মাওয়াসা, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড হেড অব এইড অ্যাঞ্জেলা নাউম্যান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।  

আলোচকরা বলেন, হাওর অঞ্চল প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে সবসময় অস্থিতিশীলতা ও ভীতি বিরাজ করে। একইসঙ্গে সম্পদ ও সেবা সীমিত হওয়ায় হাওর এলাকার মানুষরা দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দুর্ভোগ ও চরম দারিদ্র্যের শিকার। এ চিত্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা-সুবিধা দিতে সম্মিলিত ও উপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

হাওর অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও চাহিদাভিত্তিক সেবার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে বলে অভিমত জানান আলোচকরা। হাওরবাসীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় যুক্ত করতে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরিতে একীভূত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘন্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।