বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসি) কনফারেন্স অব পার্টিসের (কপ-২৫) সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে টিআইবি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২৫তম সম্মেলন (কপ২৫) আগামী ২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্যারিস চুক্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ করে অভিযোজন বাবদ তহবিল দেওয়ার অগ্রাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিগত সম্মেলনের মতো এবারও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে টিআইবি।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হওয়ায় ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সর্বোচ্চ দূষণকারীদের যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি হতে বের হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থায়নে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে অর্থায়নের প্রধান মাধ্যম সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) এ পর্যন্ত মাত্র ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট চাহিদার পরিমাণ ২০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশসহ ১০টি দেশকে জিসিএফ মাত্র ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে অনুমোদিত সর্বমোট মাত্র ০ দশমিক ৭ শতাংশ ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) অনুসারে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভিযোজন বাবদ বছরে দরকার ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো উৎস থেকে কখন এবং কিভাবে দেওয়া হবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় ক্ষতির মাত্রা যে বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০টি উন্নীত করা হবে এবং যা বিদ্যমান ৫২৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে মোট উৎপাদন ৩৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হলে বায়ুমন্ডলে বার্ষিক ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। এক্ষেত্রে উপকূলে বসবাসরত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে উপকূলীয় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলীয় জনবসতির সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান অনস্বীকার্য। নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা বেষ্টনি হয়ে ৬ দশমিক ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ রক্ষা করে আসছে। বাংলাদেশে আঘাত হানার আগেই সাম্প্রতিক প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের শক্তির ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। বুলবুলের পরিপ্রেক্ষিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এর আগেও সিডরের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকতর হতে দেয়নি সুন্দরবন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও পরামর্শ উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপাল, তালতলী ও কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বহুমুখী ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য ঝুঁকিতে রেখে রামপালসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের জাতীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের পরিপন্থি বলে আমরা মনে করি। তাই টিআইবি এ প্রকল্প স্থগিত রাখারও দাবি জানান- যোগ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষের স্বার্থে কপ-২৫ সম্মেলনের টেকসই উন্নয়নের জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্বচ্ছতা কাঠামো সম্বলিত রূপরেখা (রুল বুক) অনুযায়ী চুক্তির বাস্তবায়ন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য পেশ করছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
এসএমএকে/ওএইচ/