ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বক্তাবলীতে বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠি আজও মহামূল্যবান

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
বক্তাবলীতে বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠি আজও মহামূল্যবান

নারায়ণগঞ্জ: ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর গণহত্যা চলেছিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলীতে। এর কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও মিলেনি। তবে সেসময় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি চিঠি সংশ্লিদের কাছে মহামূল্যবান। চিঠিটি এখনও আগলে রেখেছেন এই গণহত্যায় শহীদ হওয়া একজনের ভাই।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে দেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় ফতুল্লা থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল বক্তাবলীর ২২টি পরগণায়। বর্বরোচিত এই হামলায় পাকবাহিনীর হাতে ১৩৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।

২৯ নভেম্বরের এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন রিজভী জানান, তারা মুজিব বাহিনীর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বক্তাবলী ও এর আশপাশের গ্রামের অবস্থান নিয়েছিলেন। ওই সময়ে বক্তাবলী গ্রামে এক থেকে দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করতেন তারা। বক্তাবলীতে অবস্থান করেই মূলত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্নস্থানে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার পরিকল্পনা করতেন। ঘটনার দিন তথা ২৯ নভেম্বর ছিল প্রচণ্ড শীত। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। ভোরে হঠাৎ করেই পাকবাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন তখন।

উভয়পক্ষের মধ্যে এই সম্মুখযুদ্ধ চলাকালীন মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। এতে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। তারা একত্র হয়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে প্রায় চারঘণ্টা একটানা যুদ্ধ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকহানাদাররা পিছু হটতে শুরু করে।

পরে রাজাকার, আলবদর ও শামস বাহিনীর পরামর্শে ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকহানাদাররা।

নিহতরা হলেন, শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল্লাহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজাসহ ১৩৯ জন।

এছাড়া পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পার সংলগ্ন বক্তাবলী পরগণার রাজাপুর ডিগ্রির চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রামনগর, গোপাল নগর, রাধানগরসহ ২২টি গ্রাম।

ফতুল্লা গঙ্গানগর এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার বড় ভাইকে হারিয়েছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবার হিসেবে আমাদের একটি চিঠির মাধ্যমে সমবেদনা জ্ঞাপন করে প্রত্যেক শহীদের জন্য দুই হাজার টাকা ও আহতদের জন্য ৫০০ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। এই চিঠিও আজও আমাদের কাছে আছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর আর কেউ আমাদের খোঁজ নেননি। তাই শহীদ পরিবার হিসেবেও আমরা আর স্বীকৃতি পাইনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিলে, প্রিয় ভাই/বোন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য পুত্র/পিতা/স্বামী/মা/স্ত্রী আত্মোৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশ প্রেমিকের পিতা/পুত্র/স্বামী/স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের কাছে দুই হাজার টাকার চেক পাঠানো হলো। চেক নম্বর সিএ ০০৫১৬। আমার প্রাণভরা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা নিন। ইতি- শেখ মুজিব।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০০, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।