ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিদেশ যাওয়ার টাকা না পেয়ে নির্যাতন, হাসপাতালে গৃহবধূ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
বিদেশ যাওয়ার টাকা না পেয়ে নির্যাতন, হাসপাতালে গৃহবধূ

পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন মিতু আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূ।        

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।  

জানা যায়, বিদেশে যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা না পেয়ে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

মারধরের পর তাকে নিজ ঘরে আটকে রাখেন তারা।  পরে গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত গৃহবধূ মিতু আক্তার উপজেলার সবুজনগর গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে।  

আহত মিতুর মা পাখি বেগম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার রামনা  ইউনিয়ন পরিষদে সালিশের কথা বলে তার পরিবারের লোকজনকে খবর দেন মিতুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেখানে গিয়ে মিতুকে আহত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়াম্যানের নির্দেশে ওই দিন বিকেলে আহত মিতুকে নিয়ে এসে  পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।  

তিনি আরও জানান, ছয় মাস আগে পারিবারিকভাবে পার্শ্ববর্তী জেলার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. জাহাঙ্গীর আকনের ছেলে মো. জাহিদ আকনের সঙ্গে মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরপক্ষের সব দাবি দাওয়া পূরণ করা হয়। সেসময় মিতুর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানিয়েছিলেন জাহিদ ঢাকায় চাকরি করেন। পরে এ তথ্য মিথ্যা বলে জানা যায়।

বিয়ের পর বেকার জাহিদ নানাভাবে মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। জাহিদের সৌদি প্রবাসী বাবা ১৫ দিন আগে দেশে এলে মিতুর বাবার পরিবারের সদস্যদের দাওয়াত দেন তারা। এরপর দুই পরিবারের বৈঠকে মিতুর স্বামী জাহিদকে বিদেশ পাঠানোর কথা ওঠে। সেসময় বিদেশ যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করেন জাহিদের পরিবার। মিতুর পরিবারের সদস্যরা এ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকেই স্বামী ও তার পরিরারের লোকজন মিতুর ওপর নির্দয় আচরণ শুরু করেন।  

গত মঙ্গলবার রাতে মিতুকে  দড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্দয়ভাবে মারধর করেন জাহিদ। সাত দিনের মধ্যে টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলবে এমন হুমকিও দেন। এ সময় মিতুর শাশুড়ি কনক বেগম ও ননদ শেফালি আক্তারও এ মারপিটে অংশ নেন। তাকে মারপিট করে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে তিন দিন ঘরে আটকে রাখেন৤ এতে  মিতু গুরুতর অসুস্থ  হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে সালিশের কথা বলে তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলেন। মিতুর পরিবারের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে মিতুকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সোনিয়া আক্তার বলেন, মিতুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি শারিরীক ও মানসিকভাবে বেশ অসুস্থ। সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

মিতুর ভাই মনির হোসেন বলেন, আমরা এখন বোনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে খুব শিগগিরই মামলা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।