ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নৌ-শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল খুলনা-মোংলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
নৌ-শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল খুলনা-মোংলা

খুলনা: দেশব্যাপী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে খুলনাঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে খুলনা ও মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজও।

১১ দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এ ধর্মঘট শুরু করে।

অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘটের ফলে খুলনার বিআইডব্লিউটিএর ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এবং রুজভেল্ট জেটিতে অবস্থানরত কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হয়নি।

এছাড়া খুলনা লঞ্চঘাট থেকে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। এমনকি মোংলা বন্দর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত কোথাও কোনো নৌযান চলছে না। ফলে এসব ঘাটে ছোট-বড় প্রায় ৭ শতাধিক নৌযান নোঙর ফেলে অবস্থান করছে পণ্য ওঠানামার জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা ও যশোরের নওয়াপাড়ার কার্গো বার্জ থেকে পণ্য নেওয়ার জন্য শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও নৌযান শ্রমিকরা কাজ না করায় শিল্পনগরী খুলনা ও মোংলা বন্দরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মঘটের ফলে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য বন্দরের জেটিতে আনা-নেওয়া এবং বন্দর থেকে নৌপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে মোংলা বন্দরে ধর্মঘটের কারণে এখান থেকে সারাদেশে প্রধানত নদীপথে পণ্য পরিবহন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।  

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রের ডাকা ধর্মঘট খুলনা ও মোংলায় সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় শিল্পনগরী খুলনা ও মোংলা বন্দরে অবস্থানরত সব ধরনের দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যবোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
ধর্মঘটের সমর্থনে শ্রমিকদের মিছিল।  ছবি: বাংলানিউজদেলোয়ার হোসেন বলেন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে খুলনার ঘাট এলাকায় মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে বন্দরের সব প্রকার নৌ শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখেছেন। লাইটারেজ, কার্গো, বার্জ, অয়েল ট্যাঙ্কার, কোস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের জাহাজি নৌযানের শ্রমিকরা একযোগে এই ধর্মঘট পালন করছেন। ফলে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা এবং দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নৌপথে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে নৌযান ধর্মঘটের ফলে খুলনা ও মোংলা বন্দরে অবস্থানরত সব দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যবোঝাই-খালাস কাজ বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেন নৌযান শ্রমিকরা। ১১ দফা দাবি আদায়ে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে।

১১ দফা দাবি হলো– ১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধ করা; ২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া; ৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা দেওয়া; ৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ; ৫. এনড্রোস, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ; ৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ; ৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়া; ৮. নদীর নাব্যতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন; ৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও সনদ নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা; ১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং ১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।