শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রাণ সায়ের খাল পুনঃখনন সংক্রান্ত প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে খাল খনন বন্ধ রেখে পানিসম্পদ সচিবের সাথে কথা বলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এজন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী খাল খননের স্থল পরিদর্শন ও প্রি-ওয়ার্ক করবে। কোনো ক্রটি বা অনিয়ম ধরা পড়লে তারা জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাণ সায়ের খাল পুনঃখনন কাজ তদারকির জন্য গঠিত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, জেলা নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক সদস্য হবেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রাণ সায়ের খাল খননের কাজ দেখে নেওয়ার দায়িত্ব এই জেলার মানুষের। এই কাজে কোনো অনিয়ম ও ত্রুটি যেমন মেনে নেওয়া হবে না, তেমনি খনন কাজ নিয়ে কারো কোনো লোভ থাকলে তা পরিহার করতে হবে।
এর আগে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দুটি প্যাকেজের আওতায় চলমান সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খান খননের তথ্য পড়ে শোনান।
এতে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীন ‘৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় প্রাণ-সায়ের খালের (সাতক্ষীরা খাল) সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ হতে খেজুরডাঙ্গা ৬ (ছয়) ভেন্ট স্লুইস গেট (বেতনা) পর্যন্ত (৮ কিলোমিটার হতে ১৪.৫ কিলোমিটার) ৬.৫ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে (প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-২) ৪৪৬.০১ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যার প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৪৯৫.৫৭ লাখ টাকা। এই খনন কাজ শুরুর তারিখ ২১-০৩-২০১৯ এবং সমাপ্তির তারিখ ২০-০৬-২০২০। খননকৃত মাটির পরিমাণ ১১০০৮১০৮ দশমিক ৫৯ (সিএফটি)।
টেন্ডার অনুযায়ী খালটির ডিজাইন দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে প্রথম ৫.৪২০ কিলোমিটারে রয়েছে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ হতে খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। যার বিদ্যমান তথ্য টপ এর চওড়া ১১.৬০-১৪.০০ মিটার (৩৮.০০-৪৬.০ফুট), বেডের চওড়া ২.৪৫-৩.০০মিটার (৮.০০-১০.০০ ফুট) এবং গভীরতা বিদ্যমান পাড় হতে ১.২০-১.৪০ মিটার (৪.০০-৪.৫০ ফুট)। আর পুনঃখনন এর জন্য নির্ধারিত তথ্য টপ এর চওড়া ২২.৬০-২৩.৩৬ মিটার (৭৫-৭৭.০০ ফুট), বেডের চওড়া ৬.০০ মিটার ১৯.৬৮ফুট এবং গভীরতা বিদ্যমান বেড থেকে২.৮৯-৩.৪০ মিটার (৯.৪৭-১১.১৫ ফুট)। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ৯৩২৮৬৭৯.৯০ (সিএফটি)।
আর দ্বিতীয় ১.০৮০ কিলোমিটারে রয়েছে খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে খেজুরডাঙ্গা ৬ (ছয়) ভেন্ট স্লুইস গেট পর্যন্ত। যার বিদ্যমান তথ্য টপ এর চওড়া ১২.০০-১৪.০০ মিটার (৪০-৪৬.০০ফুট), বেডের চওড়া ২.৫০-৩.০০ মিটার (৮.০০-১০.০০ফুট) ও গভীরতা বিদ্যমান পাড় হতে ১.৪০-১.৫০ মিটার (৪.৫০-৫.০০ফুট)। আর পুনঃখনন এর জন্য নির্ধারিত তথ্য টপ এর চওড়া ২২.৪১-২২.৬০ মিটার (৭৪-৭৫ ফুট), বেডের চওড়া ৫.০০ মিটার (১৬.৪০ ফুট) এবং গভীরতা বিদ্যমান বেড থেকে ২.৮৯-৩.২২ মিটার (৯.৪৭-১০.৫৬ ফুট)। এ অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ১৬৭৯৪২৮.৬৯ (সিএফটি)।
এদিকে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীন ‘৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ এর আওতায় সাতক্ষীরা খালের চরবালিথা হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রীজ পর্যন্ত (০ থেকে ৮ কিলোমিটার) পুনঃখননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে (প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-১) গোপালগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাসুদ এন্ড টেকনিফকে ৭৪৮.৪১ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে কার্যাদেশ প্রদান করেছে। যার প্রাক্কলিত মূল্য ৭৬৩.২৫ লাখ টাকা। কাজ শুরুর তারিখ ০১-০৮-২০১৯ খ্রিঃ ও সমাপ্তির তারিখ ১৬-০৬-২০২০ খ্রিঃ। খননকৃত মাটির পরিমাণ ১৫১৬৬৫৯৭ দশমিক ৩৫ (সিএফটি)।
টেন্ডার অনুযায়ী খালটির ডিজাইন দুই ভাগে বিভক্ত। যার প্রথম অংশে চরবালিথা হতে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত (০ থেকে ৪.০৪৫ কিলোমিটার) খনন করা হবে। এই অংশের বিদ্যমান তথ্য টপ এর চওড়া ১২.০০-১৫.০০ মিটার (৪০-৪৯.০০ফুট), বেডের চওড়া ২.১৩-২.৭৫ মিটার (৭.০০-৯.০০ ফুট) ও গভীরতা বিদ্যমান পাড় হতে ১.৫০-১.৭০ মিটার (৫.০০-৫.৬০ ফুট)। খননের জন্য নির্ধারিত তথ্য টপের চওড়া ২২.৮৬-২৫.৯১ মিটার (৭৫-৮৫ ফুট), বেডের চওড়া ৮.০০ মিটার (২৬.২৪) ফুট এবং গভীরতা বিদ্যমান বেড থেকে ২.৪৩-৩.২০ মিটার (৮.০০-১০.৫২ ফুট)। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমান ৮৬৮৩৭৬৮.৪৯ (সিএফটি)।
আর দ্বিতীয় অংশে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত (৪.০৪৫ হতে ৮ কিলোমিটার) খনন করা হবে। যার বিদ্যমান তথ্য টপ এর চওড়া ১১.৬০-১৪.০০ মিটার (৩৮.০০-৪৬.০০ ফুট), বেডের চওড়া ২.৪৫-৩.০০ মিটার (৮.০০-১০.০০ ফুট) এবং গভীরতা বিদ্যমান পাড় হতে১.৬০-১.৮০ মিটার (৫.৫০-৬.০০ ফুট)। আর খননের জন্য নির্ধারিত তথ্য টপের চওড়া ২১.৩৪-২২.৮৬ মিটার (৭০-৭৫ ফুট), বেডের চওড়া ৬.০০ মিটার (১৯.৬৮ ফুট) এবং গভীরতা বিদ্যমান বেড থেকে২.৭৫-৩.৪৫ মিটার (৯.০০-১১.৩৫ ফুট)। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমান ৬৪৮২৮২৮.৮৬ (সিএফটি)।
এছাড়া ৫.৫৯৫ কিলোমিটার হতে ৮ কিলোমিটার অর্থাৎ ইটাগাছা পূর্বপাড়া হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত খননকৃত মাটির পরিমান ৪৩৯৭৯৪৬.১৬ সিএফটি। যা ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে শহরের মধ্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করা হবে।
প্রেস কনফারেন্সে খাল খননের উল্লেখিত তথ্যের বিভিন্ন অংশের সাথে বাস্তবের অমিল আছে উল্লেখ করে সাংবাদিকরা বলেন, খাল খননের প্রি-ওয়ার্ক যথাযথ হয়নি। তাই তথ্য অনুযায়ী খাল খনন করলে খাল বিদ্যমান অবস্থার চেয়ে ছোট হয়ে যাবে। একই সাথে যে এলাকায় খনন কাজ শুরু হয়েছে, সেখানে খালের মাটি কেটে পাড়ের উপর রাখা হচ্ছে। যা ইতোমধ্যে ধসে ফের খালে পড়ছে। এভাবে খনন করা হলে খাল খনন কাজ কোনো উপকার আসবে না। সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে যাবে।
প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের এসব তথ্য তদারকি কমিটির মাধ্যমে বিশ্লেষণ ও প্রি-ওয়ার্ক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামান, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়েরসহ সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এমআরপি