মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এদিন পাকহানাদার বাহিনী বর্তমান উপজেলা পরিষদ, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট অফিস, হাতিপাগার বিডিআর ক্যাম্প তিনআনী বাজার ও ঝিনাইগাতির আহাম্মদ নগরে ক্যাম্প স্থাপন করে। দীর্ঘ ৯ মাসে নাকুগাঁও (বর্তমান স্থলবন্দর) ঢালু সীমান্তে ২৫ মে ভোরে পাকিস্তানী হায়েনার দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৯ জন ভারতীয় বিএসএফসহ কয়েকশ বাংলাদেশিকে হত্যা করে পাশের ভোগাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
৩০ জুন তন্তর গ্রামের সাত জনকে হত্যা করে। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। নন্নীবারমারী সড়কে একজন ক্যাপ্টেনসহ ছয়জন সৈন্য জিপ দিয়ে যাওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরণে পাকবাহিনী আতংকিত হয়ে পড়ে। শেষে কৌশল পরিবর্তন করে নালিতাবাড়ী থানা সদরে রাজাকার আল বদরদের সহায়তায় শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। এরপর ২৫ জুলাই উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন নারী-পুরুষ শিশুসহ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
১ ডিসেম্বর এ ঘাঁটি থেকে শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালালেও সফল হতে পারেনি। বরং হাছেন আলী মুন্সি, আয়াত আলী নামে দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত বরণ করেন। রাজাকার আলবদররা এ দুই বীরের মরদেহ নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। তাদের পায়ে রশি বেঁধে টেনে শহরের অদূরে মাটি চাপা দেয়।
৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে পুনরায় ক্যাম্প দখলের লড়াই শুরু হয়। এ লড়াইয়ে মিত্রবাহিনীর একটি ও মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল অংশ নেয়। টানা দুইদিন দুইরাত গুলিবর্ষনের পর ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমান দিয়ে বোম্বিং করার পরিকল্পনা করে। এতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে সে পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা আক্রমণ শিথিল করে দেয়। এ সময় ক্যাম্পের আলবদর, রাজাকাররা পালিয়ে যায়।
অবশেষে ৭ ডিসেম্বর পূর্বদিগন্তে সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা, জয়বাংলা স্লোগানে এলাকায় ঢুকতে থাকে। ক্রমেই স্লোগানের আওয়াজ স্পষ্ট হয় কেটে যায় শঙ্কা। মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে, কন্ঠ মিলিয়ে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠে সবাই। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীরা এগিয়ে যায় সামনের দিকে পিছু হটে হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় নালিতাবাড়ী। উড়নো হয় লাল সবুজের পতাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
ওএইচ/