রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর অদূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গালিমপুর, কলাকোপ ও কৈলাইল ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সচিব এসব কথা বলেন। আগল প্রগতি সংঘের উদ্যোগে মহাকবি কায়কোবাদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে এদিন ১০৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
সচিব বলেন, তরুণ সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে পারে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে নিজ পরিবারের অবদান তুলে ধরে মনোয়ার আহমেদ বলেন, আমার পিতা মরহুম বদরুদ্দীন আহমদ ওরফে বদু পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাবেক পরিচালক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে কর্তব্যরত অবস্থা বাবা মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পরিবার নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হলেও চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় দুই থেকে তিনজন প্রতিবেশী নিয়ে ঢাকার মানিক নগরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হতেন বাবা। মুক্তিযুদ্ধে চাচাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। নিজের ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হতেন। এছাড়াও উচ্চপর্যায়ে চাকরি করতেন বিধায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গোপন সংবাদ পৌঁছে দিতে পারতেন ও দিতেন। দীর্ঘদিন পরে আপনারা আমার পিতাকে স্মরণ করছেন। সন্তান হিসেবে আমি ধন্য।
‘আমার মেজ চাচা ইপিআর’র সাবেক সুবেদার মেজর বীর মুক্তিযোদ্ধা রাহাত আলী ২ নম্বর সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বীর মু্ক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী তখন ঢাকা সদর দক্ষিণের কমান্ডার ছিলেন। হালীম চৌধুরীর অধীনে আমার চাচা নবাবগঞ্জ থানার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন । তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। আমার সেজ চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শামসুল আলম ওরফে আ. হামিদ ২ নম্বর সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। হামিদ চাচা পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আগলা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোট চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আ. মান্নানও ২ নম্বর সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ’
তিনি বলেন, আমার আমার বাপ-চাচাকে সম্মাননা জানানোয় আমি গর্বিত। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার-বাপ চাচাকে আপনারা বরণ করে নিয়েছেন। সন্তান হিসেবে আমার আর কিছু পাওয়ার নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের সর্বোচ্চ পদে আসীন করেছেন। দেশের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কেউ শোধ করতে পারবে না। আমাদের পরিবারের সন্তানেরা যেনো আরও বেশি বেশি করে দেশের সেবা করার সুযোগ, পায় এটাই কামনা,’ যোগ করেন তিনি।
সাবেক গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ সুবিদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী, আগল প্রগতি সংঘের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রতন সাহা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এমআইএস/এসএ