ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শব্দ সন্ত্রাসে মধুপুরের জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
শব্দ সন্ত্রাসে মধুপুরের জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ছবি: বাংলানিউজ

মধুপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা শহর এখন শব্দ দুষণের শহরে পরিণত হয়েছে। প্রায় শতাধিক মাইকে নানামুখী প্রচারের শব্দে জন জীবন অতীষ্ঠ। সকাল থেকে রাত অবধি এসব মাইকের উচ্চ মাত্রার শব্দে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

এতে কানের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। জনস্বাস্থ্য হুমকির এ পরিস্থিতিকে বাধাহীন শব্দ সন্ত্রাস অভিহিত করে এ থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন সমাজের প্রতিনিধি।

অননুমোদিতভাবে উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরি করে গণ উপদ্রব সৃষ্টি করা শব্দ দূষণ (নিযন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর বিধি-১৭ ও ১৮ অনুযাযী  দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত অবধি অটোবাইক, রিক্সা, অটো রিক্সা, সিএনজিচালিত যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ নানা যানবাহনে মাইক বের হয় প্রচারে। বিশেষ করে মধুপুর পৌর শহরের অন্তত ২৫টি ক্লিনিক ও তার চিকিৎসকদের চিকিৎসার বাহারি প্রচার শব্দের অসহ্য যন্ত্রণা মধুপুরের সব স্তরের লোকজনের প্রতিদিন ভোগ করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

গরুর মাংস, পোল্ট্রির মাংস, লাউ ও বিভিন্ন সবজির বিচি, ভাঙারি, ছেঁড়া বই কাগজ খাতা কেনা, দোকানের পণ্যের ছাড়, সিনেমার প্রচার, মোবাইল সিম বিক্রি, ওয়াশিং পাউডার, এলইডি লাইট বিক্রি, লটারিসহ সুসংবাদ, দুঃসংবাদ, সভা সেমিনার এমন অসংখ্য কারণে মধুপুরে মাইকের শব্দ বেরেই চলছে। সব সময়ের নিয়মিত প্রচারের সাথে মধুপুরসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সভার অসংখ্য প্রচার মাইকের শব্দ যুক্ত হয়ে পরিবেশকে আরও বিষিয়ে তুলেছে।

গবেষণায় জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ১২% মানুষ শ্রবণশক্তি জটিলতায় ভুগছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ রোগসহ ফুসফুস জটিলতা, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্মরণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা। এক্ষেত্রে শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। ওই গবেষণা অনুযায়ী মধুপুরের উল্লিখত শব্দ সন্ত্রাসে ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ।

অননুমোদিত ভাবে উচ্চশব্দের যন্ত্র ব্যবহার করা হলে শব্দ দূষণ নিযন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী শব্দ যন্ত্র আটকসহ ব্যবহার কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে বেআইনী হলেও এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নিয়েছে এমন উদাহরণ তৈরি হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, মাইকে যে কোন প্রচারের জন্য পূর্বানুমতি থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন তথা থানার ওসিকে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত যাতে না হয় সেভাবে প্রচার কাজ চালানো যেতে পারে।

মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিক কামাল মধুপুরের মতো এমন মাইকে প্রচার আর কোথাও হয় কি না শঙ্কা জানিয়ে বলেন,  আইন থাকলেও অধিকাংশ সময়েই আমাকে জানানো হয় না।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা জানান, অতিরিক্ত শব্দ দুষণের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।