ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ডাকাতির পরিকল্পনা, ব্যবসায়ী খুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ডাকাতির পরিকল্পনা, ব্যবসায়ী খুন ডিবির হাতে গ্রেফতার ৫ আসামি। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেনের বাসা থেকে অর্থলুটের পরিকল্পনা করেন শাহীন। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তোবারককে হত্যা করেন শাহীন ও তার সঙ্গীরা।

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন শান্তি নিকেতন এলাকার ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পশ্চিম)।

এরা হলেন- মো. গোলাম রাব্বী, বাবুল হোসেন ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান, মো. ইমন হোসেন ওরফে হাসান, মো. আলামিন খন্দকান ওরফে রিহান।

তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, দড়ি ও লুট করে নেওয়া ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন, বাসার মোটা অঙ্কের নগদ টাকা লুট করার উদ্দেশ্যেই ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন তোবারকের সাবেক কর্মচারী শাহিন। চাকুরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে অর্থলুটের পরিকল্পনা করলেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। কিন্তু, ডাকাতির সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মারা যান ব্যবসায়ী তোবারক।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আব্দুল বাতেন বলেন, মহাখালীর মামা প্লাজার কয়েকটি দোকানের মালিক শাহ মো. তোবারক হোসেন। তার দোকান ও ব্যবসার কিছু অংশ দেখভাল করতেন শাহিন ও শিহাব নামে দুই কর্মচারী। আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে শাহিনকে বরখাস্ত করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেন তোবারক।

এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন শাহিন। তোবারকের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে সোহেল নামে এক ক্ষুদে ব্যবসায়ীর সঙ্গে শাহীন বিষয়টি আলোচনা করেন। তোবারকের বাসা থেকে টাকা লুটের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী চাঁদপুরের চারজন ও কুমিল্লার একজনকে ভাড়া করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মোহাম্মদ আলী নামে এক কেয়ারটেকার ১০ বছর আগে তোবারকের বাসায় কাজ করতেন। তার ছেলে সাজিয়ে ইমন হোসেন নামে একজনকে কৌশলে গত ১৭ ডিসেম্বর তোবারকের বাসায় পাঠানো হয়। তোবারকের কাছে নিজেকে হাসান নামে পরিচয় দেন ইমন। অনুরোধের কারণে ইমনকে নিজ বাসাতেই থাকার ব্যবস্থা করেন তোবারক। এই সুযোগে ইমন প্রতিদিনকার বিষয়গুলো মোবাইলে শাহিনকে জানাতেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রাব্বী, বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন বিকেলে চকবাজার থেকে ছয়টি ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি কেনেন। সন্ধ্যায় সবাই তোবারকের বাসা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তারা ইমন ও রিমনের বাড্ডা নর্দা এলাকার একটি মেসে অবস্থান নেন।

২৫ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের নামাজের সময় শান্তি নিকেতনের বাসার নিচে পৌঁছান তারা। বাসার দারোয়ান গেট খুলে মসজিদে গেলে ইমন নিচে নামেন এবং ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, শিহাব ও হৃদয়কে নিয়ে চারতলার ফ্ল্যাটে নিয়ে রুমে অবস্থান নেন, শাহিন ও সোহেল বাইরে থাকেন।

পরে হাসান ও অন্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে ভিকটিমের শোবার ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত তোবারক হোসেন ও সহকারী সাইফুলকে বিছানায় চেপে ধরেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনের হাত পা বেঁধে চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় বাবু নামে ভাড়াটে সন্ত্রাসীও ছুরিকাঘাতে আহত হন। ভিকটিম তোবারক নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যান তারা। এরপর নর্দায় মেসে গিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে সবাই চলে যান।

আব্দুল বাতেন জানান, এ ঘটনায় জড়িত শাহিন, শিহাব ও হৃদয় পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে মোট কত টাকা লুট হয়েছিল তা স্পষ্ট হবে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
পিএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।