ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শ্যামনগরে আদি যমুনার জমি বিক্রির ধুম!

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
শ্যামনগরে আদি যমুনার জমি বিক্রির ধুম!

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আদি যমুনা নদীর দু’পাড়ের জমি বিক্রির ধুম পড়েছে। স্থানীয়রা যে যার মতো করে সরকারি জায়গা দখল ও বেচাকেনা করছেন।

শুধু তাই নয়, আদি যমুনার দু’পাড়ে দখল হয়ে যাওয়া এসব জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে আলিশান বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাদঘাটা গ্রামের উত্তরপাড়া বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকার জহুর আলীর ছেলে একব্বার গাজীর কাছ থেকে মাস তিনেক আগে তারই প্রতিবেশী রুবেল হোসেন কিছু জায়গাসহ একটি কাঁচা বসতঘর এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। বেচাবিক্রি শেষ হওয়ার পরপরই রুবেল হোসেন সেখানে গড়ে তুলেছেন একতলা বাড়ি। প্রায় ১২শ বর্গফুটের ওই বাড়ির সামনের অংশেও গড়ে তোলা হচ্ছে আরও একটি পাকা বাড়ি।

তবে জমি বেচাকেনা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। বিক্রেতা ও ক্রেতা দু’জনেই খুশি এই লেনদেন নিয়ে। কেননা সরকারি জায়গা বিক্রি করে বিক্রেতা যে দাম পেয়েছে তাতেই খুশি। আর ক্রেতা রুবেলও খুশি গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা নামমাত্র মূল্যে কিনতে পারায়।  

শুধু যে একব্বার গাজী আর রুবেল হোসেন এমন জায়গা-জমি কেনাবেচা করছেন তা নয়। বরং তাদের মত স্থানীয় আরও অনেকে রীতিমত সরকারি জায়গা-জমি টাকার বিনিময়ে হাত বদলের কার্যক্রম চালাচ্ছেন ধুমছে।

এর আগে আবু বক্কার নামে এক ব্যক্তি তাদের বসতবাড়িসহ সরকারি কিছু জায়গা বিক্রি করে দেন জনৈক মানিক গাজীর ছেলে মোবারক হোসেনসহ অন্যদের কাছে।  

সাইদুর ও সফিকুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তিও একইভাবে অন্যদের কাছে যমুনা পাড়ের জায়গা-জমি বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন।  

এভাবেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি সম্পত্তি দেদারছে কেনাবেচা চলছে শ্যামনগরে।  

কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার সুযোগে স্থানীয় সুবিধাভোগীরা সরকারি এসব জায়গা জমি দিনের পর দিন হাত বদল করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

পাউবো নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি এসব জায়গা নিয়ে এমন ব্যবসা চালু থাকলেও তারা জানেই না যে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি জায়গা বেচা-বিক্রি হচ্ছে আর একের পর এক পাকা বসতবাড়ি গড়ে তোলা হচ্ছে।
 
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কিছু নিম্ন পদস্থ কর্মচারী যমুনার পাড়ের পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গা জমি বিক্রির বিষয়ে অবগত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছে না।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী সব সরকারি জায়গা থেকে যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তারা অদ্যাবধি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলকারী অবৈধ দখলদরদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।  

বাদঘাটা ও চন্ডিপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম ও আব্দুস সোবহান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সূত্র ধরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল ও দেবহাটার সাপমরা খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবল থেকে সাতক্ষীরা ও দেবহাটাবাসী রেহাই পাবে। একইভাবে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্যামনগরের যমুনা নদী পুনঃখনন কাজ শুরুর মাধ্যমে শ্যামনগর সদরসহ আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেন।  

এ বিষয়ে শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার মাসুদ রানা জানান, ইতোপূর্বে তারা যমুনা পুনঃখনন কাজের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও অনুরূপ একটি প্রকল্প জমা দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রকল্প অনুমোদন হলেই যমুনা পুনঃখননসহ পাউবোর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদ করা হবে।  

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড তার জায়গা কাউকে ইজারা দেয় না, দেয়নি।

যমুনা খাল পুনঃখনন কাজের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা পুনঃখনন কাজ করার পাশাপাশি তার জায়গা উদ্ধার করবে।  

পাউবোর এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, পাউবোর জায়গা বেচাকেনা করার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি টাকা দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অন্যের কাছ থেকে কেনে তবে সেটা তার নির্বুদ্ধিতা। উচ্ছেদকালে কে টাকা দিয়েছে, আর কে নিয়েছে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।