জানা গেছে, জয়পুরহাট-(হিচনী)-পুরান আইপল-পাঁচবিবি-হিলি (শহর লিংকসহ) মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রসারণ ও প্রশস্তকরণ করা হবে ২৯ কিলোমিটার সড়ক। এ কারণে প্রায় ২০০ বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর খরচ হিসেবে ২ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে সংশিষ্টদের।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৫ মে মাসে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার, জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ৪৪ লাখ ৭ হাজার ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডকে (নেসকো) ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরো কম, মাত্র ২ শতাংশ।
সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
টাকা পরিশোধের পরও খুঁটি সড়কে থাকা প্রসঙ্গে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (টেকনিক্যাল) মো. সুহেল আখতার বাংলানিউজকে বলেন, ‘দিনাজপুরের বিরামপুর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজ চলমান আছে। অচিরেই জয়পুরহাটে খুঁটি সরানোর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। ’
আইএমইডি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের আওতায় ২৯ কিলোমিটার সড়কাংশ যথা মান উন্নীতকরণ ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ করার কাজ এখনও অধরায় রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৯৬ কোটি ৮৩ লাখ। অথচ এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি। ৪ কোটির মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি সরাতেই প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার। তারপরও সরেনি খুঁটি। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সময় আছে মাত্র ৬ মাস। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। বেঁধে দেয়া সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আইএমইডির পরিদর্শনে আরো দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১১ দশমিক ৯৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৬১ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। জয়পুরহাট অংশে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ১০ দশমিক ১১ হেক্টর এবং দিনাজপুর অংশে ১ দশমিক ৮২ হেক্টর। অথচ এখনও প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। অগ্রগতি বলতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রকল্পটি জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলা মহাসড়কসমূহ সড়ক নেটওয়ার্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জয়পুরহাট সড়ক এবং জয়পুরহাট বাইপাস সড়ক দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। জয়পুরহাট-পাঁচবিবি-হিলি সড়কটি জয়পুরহাট সদর থেকে শুরু হয়ে পাঁচবিবি উপজেলা এবং হিলি স্থল বন্দর থেকে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। অপরদিকে জয়পুরহাট বাইপাস সড়কটি মোকামতলা-কালাই-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ অঞ্চলের জনসাধারণের সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। দুটি সড়কের উন্নয়ন করা হলে এসব এলাকায় নিরাপদ ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি শুরু হয়। অথচ অধরায় রয়েছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি।
প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য সড়ক নিরাপত্তার মাধ্যমে যানবাহন ও পণ্য চলাচল বৃদ্ধি ও ট্রাফিক জ্যাম কমানোর মাধ্যমে সময় ও যানবাহন অপারেশন ব্যয় কমানো। ট্রাফিক জ্যাম হ্রাসের মাধ্যমে ভ্রমণ সময় ও যানবাহন অপারেশন ব্যয় কম পাবে। এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্প ও আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ১ দশমিক ৩১ লাখ ঘন মিটার মাটির কাজ ও সড়ক প্রশস্তকরণ। অথচ কোন কাজই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ২৮ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার সার্ফেসিং ও ১০ কিলোমিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজও থমকে আছে। ৬ হাজার ৬৬০ মিটার সসার ড্রেন ও ১ হাজার ৬১০ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিং কাজও থেমে আছে। প্রকল্প এলাকায় এখনও বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এগুলো এখনো সরানোর কাজে হাত দেয়নি।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলমান। তবে অগ্রগতি কম। প্রকল্প এলাকায় এখনও বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা রয়েছে। এগুলো না সরলে বাস্তবায়ন কঠিন। বর্তমানে ভালো মানের ইটও পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন বছরের শুরু থেকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলবে। ’
বিদ্যুতের খুঁটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২৯ কিলোমিটার সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর টাকা সংশ্লিষ্টদের পরিশোধ করা হয়েছে। তবু খুঁটি সড়কে রয়ে গেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
এমআইএস/এজে