বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পড়ে থাকা কেমিক্যাল বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে। আইনি জটিলতায় তারা এগুলো সরাতে পারছে না।
জানা যায়, দেশে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যে কাঁচামাল কেমিক্যাল ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে তার ৭০ শতাংশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে হয়। এসব পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড, রাসায়নিক দ্রব্য ও কেমিক্যাল জাতীয় পাউডার ও বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে। কিছু কিছু রাসায়নিক পণ্য এতো বিপদজনক যে ট্রাকে বা গোডাউনে থাকা অবস্থায় তেজস্ক্রিয় হয়ে আগুন ধরে যায়। গত তিন বছরে বেনাপোল বন্দরে এ ধরনের ছোট বড় চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর ওই সব কেমিক্যালের বর্জ্য নিরাপদ কোনো জায়গায় না সরিয়ে বছরের পর বছর বন্দরের জনবসতি এলাকায় ও বন্দর অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
ভুক্তভোগী বন্দর এলাকার গ্রামবাসী বদরউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের বর্জ্যের কারণে বিভিন্নভাবে তারা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া বন্দরের মধ্যে থেকে অ্যাসিড মিশ্রিত পানি প্রবেশ করছে জনবসতি এলাকায়। এতে তাদের চলাচল ও বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ২০ বছর ধরে ভুক্তভোগী মানুষ বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এর থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। বন্দরে যারা ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের কাজ করছে সেই শ্রমিকরাও নিরাপদে নেই।
বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সেখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। এতে জায়গা না পেয়ে মূল্যবান সামগ্রী খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। ফলে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়।
বেনাপোল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক (রসায়ন) প্রদীপ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, কেমিক্যাল বর্জ্য বাতাসে মিশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে চুলকানিসহ স্কিন ক্যানসার হতে পারে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, আমদানিকৃত ভারতীয় কেমিক্যাল পণ্যে আগুন ধরে এ বর্জ্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত যাতে এসব বর্জ্য নিষ্কাশন করা যায় এজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আশিক মাহামুদ সবুজ বাংলানিউজকে জানান, যত্রতত্র কেমিক্যাল বর্জ্যে নানাভাবে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি পরিবেশের উপরও আঘাত হানতে পারে। তাই এসব বর্জ্য সংরক্ষণে রাখা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এনটি