বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে সমবেত হয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টায় তারা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বিকেলে শিক্ষার্থীরা চোখে কালো কাপড় বেধে 'পরিণতি' নামে প্রতীকী পথনাটক করেন। এরপর সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। রাত ৮টায় তারা ঢোল-তবলা নিয়ে বিদ্রোহের গান গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে। রাত ১২টায় তারা কলা-রুটি খেয়ে কনকনে শীত উপেক্ষা করে রাত জেগে এ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- আবসন সংকট দূরীকরণ, বেতন ফিসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বেতন কমানো, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও কোডিং পদ্ধতির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি অধ্যাদেশের সংস্কার তথা সাংস্কৃতিক অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি ও মুক্তচিন্তা বিকাশে অধ্যাদেশের ব্যবস্থাকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যেসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রতিকার করা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ প্রদানে ডিনদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের লিখিত বক্তব্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন টার্ম রেজিস্ট্রেশনের আগেই বেতন-ফি সহনীয় মাত্রায় কমানোর দাবি জানান। এ সময় ফি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা না হলে তারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলেও জানান।
তারা আরও জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৯০ এর ৫ম খণ্ড, দাগ নম্বর ৪৫, পৃষ্ঠা ৬৬১৫-এ উল্লেখ আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র সংবিধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত স্থান ও শর্তাধীনে বসবাস করবে। অথচ মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৩১.৫৯ শতাংশ আবাসন এর সুযোগ পায়। আবাসন সংকট নিরসনে কতদিনের মধ্যে নতুন হল হবে তা লিখিত আকারে জানানোর পাশাপাশি নতুন হল নির্মাণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হোস্টেল ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।
এছাড়া পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরিক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন এবং প্রয়োজন অনুসারে তৃতীয় পরিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু করার দাবি জানান। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদন ব্যবস্থা আয়োজন ও ম্যাগাজিন, বুলেটিন, পোস্টার প্রকাশনায় শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিতের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া গল্প, উপন্যাস, জার্নাল, একাডেমিক গ্রন্থসহ সব ধরনের বই বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক রাখার পাশাপাশি মেডিক্যালে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম কেনার দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। যদি কোনো অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায় তবে অবশ্যই প্রত্যেককে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করবে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২০
এমআরএম/আরএ