মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তথ্যসচিব কামরুন নাহার, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি নির্বাচনী ইশতেহার রয়েছে। এ ইশতেহার হচ্ছে নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত দলিল। সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা এক বছরে যতটুকু অগ্রগতি অর্জন করবো বলে নির্ধারণ করেছিলাম, আমরা এর চেয়ে বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে আরও বেশি অগ্রগতি হতো।
সাফল্যের ধারাবাহিতা আগামী চার বছর অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক ও সংঘর্ষের রাজনীতি পরিহারের পক্ষে। আমরা ২০০৮ সালে দু’টি শ্লোগান দিয়েছিলাম। একটি- হচ্ছে দিনবদল, আরেকটি হচ্ছে- ডিজিটাল বাংলাদেশ। সে লক্ষ্য অর্জন আমরা অনেক আগেই করতে সক্ষম হয়েছি। দিন বদল হয়েছে। এখন দেশবাসীর মুখে ‘ভাত দেন মা আমাকে’ ডাক শোনা যায় না। আমরা ক্ষুধা জয় করতে সক্ষম হয়েছি। দেশে ছেঁড়া কাপড় পরা বা খালি পায়ে মানুষ সহজে দেখা যায় না। দিন বদল করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
‘গত নির্বাচনে আমরা শ্লোগান দিয়েছিলাম- তারুণ্যই শক্তি, তারুণ্যেই সমৃদ্ধি। আরেকটি শ্লোগান দিয়েছিলাম- গ্রাম হবে শহর। আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। গ্রাম হবে শহর বলতে আমরা এটাই বুঝাতে চেয়েছি, গ্রামের মানুষ শহরের সব সুবিধা পাবেন। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ গ্রামের মানুষ শহরের প্রায় সব সুবিধা পাচ্ছেন। গ্রামে এখন ফ্রিজ, টেলিভিশন, কেবল নেটওয়ার্ক রয়েছে। ’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখন গ্রাম আর শহরের ছেলের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় না। আজ থেকে ১৫ বছর আগে কে গ্রামের ছেলে আর কে শহরের ছেলে বোঝা যেত। এখন দেখা যায়, অনেকক্ষেত্রে শহরের ছেলেদের তুলনায় গ্রামের ছেলেরা অনেক বেশি স্মার্ট। সুতরাং গ্রামই হবে শহর, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামী চার বছরে সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো।
১০ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গতবছরও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যের বছর ছিল উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে, ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সে অভিযাত্রায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি ছিল ছয় শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেটি ২০০৮ সালে ছিল ৬০০ ডলার, সেটি গতবছর ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারে, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার। বর্তমান বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। এতো ব্যাপকভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।
বিদ্যুৎখাত প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন দেশে ৪০ শতাংশের মতো মানুষ বিদ্যুৎ পেতো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩৩শ’ মেগাওয়াট। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে সে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট। ৯৫ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মুজিববর্ষে আমরা আশা করছি দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
জিসিজি/এফএম