টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের একবছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জনগণকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের জন্য কী করতে চেয়েছিলাম আর কী করতে পেরেছি এ বিষয়ে আমরা সব সময়ই সচেতন।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। মাথাপিছু আয় ১২শ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব মতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
‘২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের প্রমাণ মেলে তার বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায়। ২০০৫-৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার সাড়ে আট গুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়। বাজেটের নব্বই ভাগই এখন বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে।
প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নিচে। বছরের শেষ দিকে আমদানি-নির্ভর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ব্যতীত অন্য নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক ছিল।
ছোট-খাট বাধা বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ছোটখাটো অভিঘাত এই অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। ’
মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। পাবনার রূপপুরে ২৪শ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এমইউএম/এএ