ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভাড়া পরে ধরমুনি, আগে আগুন পোয়াইয়া শরীর গরম করি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২০
‘ভাড়া পরে ধরমুনি, আগে আগুন পোয়াইয়া শরীর গরম করি’

সিরাজগঞ্জ: সকালে এনজিওর কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হবে তাই তীব্র শীতের রাতেও শহরে রিকশা নিয়ে এসেছেন মধ্যবয়সী চান্দু মিয়া।  

রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে দু’একটি ভাড়া মিলেছে তার ভাগ্যে। তাতে যা রোজগার হয়েছে তা দিয়ে কিস্তির অর্ধেকও হয়নি।

আরও কাজ করতে হবে তাকে। কিন্তু শীতের তীব্রতায় শরীর জুবুথুবু। এ অবস্থায় আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।  

বাজার স্টেশন এলাকায় বেশ কয়েক রিকশাচালক আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছিলেন। রিকশা দাঁড় করিয়ে সেখানেই বসে পড়লেন চান্দু মিয়া।  

ভাড়ায় যাবেন কিনা জিজ্ঞেস করলে চান্দু মিয়া বলেন, ভাড়া পরে ধরমুনি, আগে আগুন পোয়াইয়া গরম শরীরটা গরম করি। কাম তো করা লাইগবোই। কাইল সাড়ে পাঁচশ ট্যাহা কিস্তি আছে। রাতের মধ্যে কাম কইরা কিস্তির ট্যাহা জোগাড় করা লাইগো। তিন ঘণ্টা কাম কইরা কেবল আড়াইশো ট্যাহা অইচে।  
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নিচ্ছিলেন শিয়ালকোল গ্রামের রফিকুল, চন্ডিদাসগাতীর আনোয়ার, চক শিয়ালকোলের ইউসুব, কান্দাপাড়ার সবুজসহ ১০/১২ জন রিকশাচালক।  

জানতে চাইলে এসব রিকশা চালকরা বলেন, কুয়াশার কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আলো জ্বালিয়ে সামনে কিছু দেখা যায় না। রাস্তার খানাখন্দ চোখে পড়ে না। আর প্রচণ্ড শীতে হাত-পা জমে আসছে। তারপরও ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছি। কিছুক্ষণ রিকশা চালানোর পর হাত-পা অবশ হয়ে যায়। এ কারণে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে হচ্ছে।           

শিবনাথপুর গ্রামের রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, রাইত ৯টা থেকে কাম কইরত্যাছি। শীতের মধ্যে গাড়ি চালানো খুব কষ্ট। কিন্তু প্যাট তো আর শীত গরম দেখে না। দায়ে পইড়াই কামে আইচি। শহরে লোকজনের ভিড়ও কম, যাত্রী অয় না। কিছুক্ষণ কাম করার পর ছেড়া কাগজ কুড়াইয়া আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করত্যাছি।  

বয়োবৃদ্ধ রিকশাচালক রফিকুল, গহের আলী, আল-আমিন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। শীত দেইহ্যা ঘরে বইস্যা থাকলে আমাগোরে চইলবো না।  

এক সপ্তাহ কিছুটা স্বাভাবিক থাকার পর গত দু’দিন ধরে সিরাজগঞ্জে ফের জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। প্রচণ্ড শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাতভর শহরের মানুষকে যাত্রীসেবা দেওয়া এসব রিকশাচালক। এদের অধিকাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংসার খরচের পাশাপাশি কিস্তির টাকার জোগাড়ের জন্য অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন তারা।  

তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত দু’দিন ধরে তাপমাত্রা কমছে। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২০
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।