অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন অলিগলির উপ-সড়কগুলোর আরও বেহাল অবস্থা। যে কারণে মানুষের চলাচলের পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বেশি।
তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বলছে, বর্তমানে ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ চলছে। দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী দুইমাসের মধ্যে যাতে কাজ শুরু করা যায় সে চেষ্টা চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের লালদীঘির পাড় এলাকা থেকে লিংক রোড পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরপুর। এর মধ্যে বাজারঘাটা, বার্মিজ স্কুল, কালুর দোকান, বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া শহরের সর্বত্র সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তও যানজট লেগে থাকে।
মঙ্গলবার বিকেলে শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় ঢাকার সাভার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. আব্দুল্লাহ ফয়সাল বলেন, সারা দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু দেশের প্রধান একটি পর্যটন শহরের রাস্তা-ঘাটের এত বেহাল অবস্থা দেখে আমরা সত্যিই হতাশ হয়েছি।
‘আমি মনে করি এই বার্মিজ মার্কেটও কক্সবাজার পর্যটনের একটি অংশ। কিন্তু আসতে যদি এতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা পর্যটকদের জন্য অনেক হতাশা ও কষ্টের বিষয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো অনেকে কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,’ যোগ করেন তিনি।
শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার মূলত নামে পর্যটন শহর। এখানে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু এখানকার রাস্তাঘাটের বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হবে এই কক্সবাজার কোনো অভিভাবক নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরে ঢুকেই রাস্তঘাটের এই ধ্বংসস্তূপ দেখে হতাশ হচ্ছেন পর্যটকেরা। শুধু প্রধান সড়ক নয়, শহরের অলি-গলির সড়কগুলোর আরও বেহাল দশা। আমি মনে করি জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়কগুলো সংস্কার করা না হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জানা যায়, শহরের প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন সড়ক বিভাগের অধীনে ছিল। সম্প্রতি শহরের প্রধান সড়কটি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) হাতে ন্যস্ত করা হয়। ফলে সড়ক বিভাগ আর পৌরসভা এদিকে নজর দিচ্ছে না। এর মধ্যে কউক কয়েকবার ছোট-খাটো সংস্কার কাজ চালালেও তাতে মানুষের দুর্ভোগ নিরসন হচ্ছে না।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শহরের সৌন্দর্য বর্ধন ও যানজট নিরসনের এবং পরিকল্পিত নগরায়নের অংশ হিসেবে কক্সবাজার শহরের ‘হলিডের মোড়-বাজারঘাটা হয়ে লারপাড়া বাসস্ট্যান্ড’ পর্যন্ত প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২৯৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
এরই মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কিন্তু এখনও সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি।
কক্সবাজার পিপলস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ফরহাদ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কক্সবাজারকে পর্যটন রাজধানী বলি,কিন্তু কক্সবাজারেরর বর্তমান চেহারা দেখলে মনে হয় এটা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহর।
‘মাসের পর মাস ধরে শহরের প্রধান সড়ক এবং উপ-সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে হাজার হাজার পর্যটক এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী ভোগান্তির শিকার হলেও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং পৌরসভার নজরে আসছে না। যে কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এখানকার পর্যটন শিল্পে। ’
গত থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজারে পর্যটক শূন্যতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা এটিও অন্যতম একটি কারণ।
তবে এ ব্যাপারে জানতে কউক-এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রকল্পটির জন্যই আমি দিনের পর দিন ঢাকা পড়ে আছি, কাজ শুরু করার জন্য তোড়জোর চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারি প্রকল্প, আমি চাইলেই তো যেনতেনভাবে শুরু করে দিতে পারি না। কিছু প্রক্রিয়া আছে, প্রক্রিয়াগুলো শেষ না করে তো টেন্ডারে যাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে ড্রয়িং-ডিজাইনের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবো। আমি চেষ্টা করছি আগামী দুইমাসের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য।
‘এই প্রকল্পে দুইপাশে সড়ক প্রশস্তকরণ, সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ নানা কাজের পাশাপাশি ১৩টি কালভার্টও রয়েছে। আমি পরিকল্পনা করছি, দ্রুত কাজ শেষ করতে দুইদিক থেকে কাজ শুরু করা হবে। ’
লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘পর্যটক ও স্থানীয় মানুষজন কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমরা দেখছি, তবুও একটা পরিকল্পনা করেই তো কাজ শুরু করতে হবে। এর জন্য আর কিছুদিন মানুষকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ’
শহরের অলি-গলির বেহাল অবস্থার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি সড়ক নির্মাণের বিষয়ে টেন্ডার হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়াধীন। এসব শেষ হলে শহরের চেহারা পাল্টে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, জানুযারি ০৯, ২০২০
এসবি/এমএ