অভ্যন্তরীণ এই রুটের যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো বিমান ওঠানামার ব্যবস্থাও থাকছে এই আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা।
দু'বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হলে পিছিয়ে পড়া রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাতপণ্য দ্রুত বহির্বিশ্বের রফতানিসহ শিল্পায়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে একটির বেশি উড়োজাহাজ রানওয়েতে নামতে বা উঠতে পারে না। তবে বিমানবন্দর আধুনিয়াকায়ন প্রকল্প শেষে হলে একইসঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ দাঁড়াতে পারবে। কারণ কার্গো বিমান ওঠানামাসহ একসঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ পার্কিং করার ব্যবস্থা রেখেই এবার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর। এর আওতায় বর্তমানে শাহ মখদুম বিমানবন্দরে থাকা ৬ হাজার ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ে বাড়িয়ে ১০ হাজার ফুট করা হবে। এর প্রস্থ তখন ১০০ ফুট থেকে বেড়ে হবে ১৫০ ফুট। আর এখনকার ২৬০X২৫০ ফুটের অ্যাপ্রণ হবে ২৭৫X২৫০ ফুট। নির্মিতব্য আধুনিক টার্মিনাল ভবনটির নিচতলার আয়তন হবে ১৭ হাজার বর্গফুট।
দ্বিতীয় তলাটি হবে ১১ হাজার বর্গফুটের। টাওয়ার ও অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে টার্মিনাল ভবনটিতে জায়গা থাকবে ৩১ হাজার বর্গফুট। সুপরিসর টার্মিনাল ভবনে চেকইন কাউন্টারের সংখ্যা এখনকার তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে। সঙ্গে থাকবে বিশাকৃতির কনকার্স হল, ডিপারচার লাউঞ্জ, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, স্ন্যাকস কর্নার ও একটি ভিআইপি লাউঞ্জ। মন্ত্রণালয়ের গ্রহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী দু’বছর মেয়াদি এই আধুনিকায়ন প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হক জানান, রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের আধীনে বড় উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য বর্তমান রানওয়ে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে যেন তিনটি উড়োজাহাজ পার্ক করার যায় সে অনুযায়ী অ্যাপ্রনের আয়তন বাড়ানো হবে।
সেই সঙ্গে নতুন একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। আর এর সাথে যাত্রীদের জন্য বোর্ডিং ব্রিজের সুবিধা রাখার বিষয়টিও তাদের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে। এটি যুক্ত হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। কাজটি শেষ হলে শাহ মখদুম বিমানবন্দর নতুন রূপ পাবে বলেও উল্লেখ করেন বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব।
এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। গত ৪ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন রাজশাহী বিমানবন্দর পরিদর্শনও করেছেন।
এরই লক্ষ্যে গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর পরিদর্শনে যান বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম এই বিমানবন্দরটিকে শিগগিরই ঢেলে সাজানো হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরপরই ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) করা হয়েছে।
আর সরেজমিনে এসে সব দেখেও গেলাম। শিগগিরই এই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এর আওতায় রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হবে।
বিমান প্রতিমন্ত্রী জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে জুনের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্গো উড়োজাহাজ কেনার অনুমোদন দিয়েছেন। শিগগির পণ্যবাহী উড়োজাহাজগুলোও দেশে আসবে। আর শাহ মখদুম বিমানবন্দর আধুনিকায়নের পর এখান থেকেও কার্গো বিমান পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ২০২২ সালের জুন নাগাদ দু’বছর মেয়াদি এই আধুনিকায়ক কাজ শেষ হবে বলেও আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে, রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রতিনিয়ত যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাও তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। ৩৬ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি দু’টি সংস্থা মিলিয়ে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট যাত্রী পরিবহন করছে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হওয়ায় শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের তিনটি এয়ারলাইন্স। প্রতিটি এয়ারলাইন্সের দু’টি করে মোট ৬টি ফ্লাইট প্রতিদিন চলাচল করছে। ফলে এই রুটে সপ্তাহে মোট ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ যাত্রী অভাবে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে আবারও রাজশাহী-রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। রাজশাহী-ঢাকা অভ্যন্তরীণ রুটে প্রথম ডানা মেলে পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ূরপঙ্খী’ নামে কানাডার তৈরি ৭৪ আসনের ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেলের দু’টি উড়োজাহাজ দেওয়া হয় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য। এখন বিমান ছাড়াও বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে এই বিমানবন্দরটিতে।
এক নজরে শাহ মখদুম (রহ.) বিমান বন্দর:
রাজশাহীর নওহাটায় ১৬২ একর জমির ওপর ১৯৮৪ সালে শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৪ ফুট (২০ মিটার) ওপরে অবস্থিত। এর মাত্র একটি রানওয়ে আছে। যার দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৬০০ ফুট। আর প্রস্থে ৯৮ ফুট। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৬ সালের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত বিমানবন্দরটি ছিল লাভজনক অবস্থানে। একপর্যায়ে মাত্র দু’জন যাত্রী নিয়েও প্লেন উড়েছে এই বিমানবন্দর থেকে। এই রুগ্নদশা চলতে চলতে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে প্লেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
এসএস/এজে