মামলার ধার্য তারিখ থাকায় অন্যান্য দিনের থেকে আদালতের অধিকতর নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করছেন ডিবি পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
মামলার ধার্য তারিখ থাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। একই সঙ্গে এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকেও বরগুনার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে হাজির হয়েছেন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
এ মামলার সংশ্লিষ্ট সব আইনজীবী বাংলানিউজকে জানান, রিফাত হত্যা মামলার দুই সাক্ষীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৮ জানুয়ারি (বুধবার) বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে শোকজ করেছেন আদালত। আজ শোকজের উত্তর আদালতে উপস্থাপন করবেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম।
মিন্নির জামিন কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে আদালতের শোকজ দেওয়ার পর মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, ‘মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যে অভিযোগ করেছে তার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অবিশ্বাসযোগ্য। ’
রিফাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের মনোনীত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. মজিবুল হক কিসলু বাংলানিউজকে জানান, আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য তারিখ রয়েছে। একই সঙ্গে এ মামলার অন্যতম আসামি নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন কেন বাতিল হবে না, এ মর্মে আদালতে শোকজের উত্তর দেওয়ার কথা রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর।
তিনি আরও বলেন, মিন্নির জামিন বাতিল করা বা না করার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করা শোকজের উত্তরে যদি আদালত সন্তুষ্ট হয় তাহলে মিন্নির জামিন বাতিল নাও হতে পারে। আদালত চাইলে মিন্নির জামিন বাতিল করতে পারেন অথবা এ বিষয়ে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন।
২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এ দু ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি প্রিন্স মোল্লা উচ্চ আদালতের আদেশে এবং বরগুনার শিশু আদালতের আদেশে মারুফ মল্লিক এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ জামিনে রয়েছেন। বাকি আসামিরা কারাগারে।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অন্যদিকে গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।
রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তরা হলেন- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান, মো. ওলিউল্লাহ অলি, জয় চন্দ্র সরকার চন্দন, মো. নাইম, মো. তানভীর হোসেন, নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত, মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক, প্রিন্স মোল্লা, রাতুল সিকদার জয় এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন নিহত রিফাতের দুই চাচাসহ এ মামলার তিনজন সাক্ষী। বিকেলে বরগুনা শিশু আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম এবং চাচাতো বোন নুসরাত জাহান অনন্যা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
আরএ