ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বজনদের বোঝা হয়ে আরও এক বৃদ্ধার ঠাঁই মিললো হাসপাতালে

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
স্বজনদের বোঝা হয়ে আরও এক বৃদ্ধার ঠাঁই মিললো হাসপাতালে

সিরাজগঞ্জ: খলিল, হাসনা বেগম ও শ্যামলী রানীর পর আরও এক অসুস্থ বৃদ্ধা (৬০) হলেন স্বজনদের বোঝা! তারও ঠাঁই মিললো হাসপাতালে। অজ্ঞাতপরিচয় এ বৃদ্ধা সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বাজার এলাকার নদীর পাশের একটি পরিত্যক্ত স্থানে বেশ কিছুদিন ধরেই পড়ে ছিলেন। 

তবে রক্তের সম্পর্ক যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে ঠিক তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় মানবতা। অসহায় এ বৃদ্ধার পাশে এসে দাঁড়ালেন ‘দি বার্ড সেফটি হাউস’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ভর্তি করলেন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে।  

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস ও তার সহযোগী লোকমান হোসেন ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করেন।  

সলঙ্গা অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও বাজারের সাইকেল মেরামত মিস্ত্রি আব্দুল মমিন জানান, তিন মাস আগে রাতের অন্ধকারে অসুস্থ এই বৃদ্ধাকে  নদীর পাশের একটি পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে রেখে যায় তার স্বজনেরা। গুরুতর অসুস্থ এ বৃদ্ধা চলাফেরা করতে পারেন না এবং কোনো কথাও বলতে পারছিলেন না। এ কারণে তার নাম পরিচয় বা স্বজনদের ঠিকানাও জানা যায়নি। এরপর থেকে স্থানীয়রা তাকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রচণ্ড শীতে খোলা স্থানে কষ্ট পাচ্ছিলেন দেখে এলাকাবাসী ওই স্থানেই তাকে একটি পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে দেন। কনকনে ঠাণ্ডায় কিছু খড় ও পুরোনো কম্বল মুড়িয়ে পড়ে ছিলেন তিনি।  

বিষয়টি স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপ সংগঠন ‘বর্ণচ্ছটা’র নজরে এলে তারা শাহজাদপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ড সেফটি হাউসকে অবগত করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

দি বার্ড সেফটি হাউসের সভাপতি মামুন বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় সাংবাদিক  সোহেল রানা ও বর্ণচ্ছটা সংগঠনের সদস্যরা ওই বৃদ্ধার কথা আমাকে জানান। খবর পেয়ে শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে গোসল করাই। এরপর নতুন পোশাক পরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি।  

তিনি বলেন, চিকৎসকরা রোববার (১৯ জানুয়ারি) তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার করেছেন। পাশাপাশি তার স্বজনদেরও সন্ধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রোকনুজ্জামান বলেন, তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই বৃদ্ধা বিড় বিড় করতে থাকেন কিছু বলতে চান কিন্তু পারেন না। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছেন না।  

এর আগে প্রায় ২ বছর আগে শাহজাদপুরে বেতকান্দি এলাকায় খলিল নামে এক অসুস্থ বৃদ্ধকে ফেলে রেখে যায় স্বজনেরা। একই বছর হাসনা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে পালিয়ে যায় তার পরিবারের লোকজন। গত বছরের এপ্রিল মাসে বৃদ্ধা শ্যামলীকে সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেখে যায় সন্তানেরা এবং একই বছর জুন মাসে শাহজাদপুরের একটি মাজারের পাশে অজ্ঞাত পরিচয় এক বৃদ্ধাকে ফেলে রেখে যায় নিজের আত্মীয়রা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।