খুলনা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র শান্তিধামের মোড়ে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) উদ্যোগে মাসব্যাপী এ মেলা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। এছাড়া খুলনা প্রেসক্লাবেও চলছে দু’দিনব্যাপী পিঠামেলা ও সার্কিট হাউজ মাঠে চলছে দু’দিনব্যাপী বিমা মেলা।
চলমান এ মেলাগুলোর কয়েকদিন আগে শিববাড়ির মোড়ে তিন দিনব্যাপী রসমেলা, একাধিক স্থানে শীতের পিঠামেলা হয়েছে। এরপর আসছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার মাঠে মাসব্যাপী বইমেলা, ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রয়্যাল হোটেলে তিন দিনব্যাপী ফাগুনমেলা ও ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা। বছরের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের মেলার আয়োজন চলছে। যেন মেলার নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা শহর। মেলার উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র নগরীতে।
চলমান মেলাগুলোর মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র ও হস্ত-কুটির শিল্পমেলা। তবে মেলায় এবার বেশি আকর্ষণ কসমেটিক্স ও গৃহস্থলীর দ্রব্যাদি। ওইসব পণ্য কিনতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে নানা বয়সী নারী-পুরুষ। বেড়ানোর জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেকেই এসেছেন মেলায়। অনেকে শুধু ঘুরতে একাই মেলায় এসেছেন।
সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীসহ নারীদের প্রচণ্ড ভিড়। তারা পছন্দের কসমেটিক্স ও ঘর সাজাতে গৃহস্থলীর জিনিসপত্র কিনছেন। আর ম্যাজিক নৌকাসহ অন্যান্য রাইডে বিনোদন নিচ্ছে শিশুরা।
কসমেটিক্স দোকানের কয়েকজন ক্রেতা বলেন, মেলায় এসেছি ঘুরতে, কসমেটিক্স ও বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার পছন্দ হয়েছে, সেগুলো কিনেছি।
নেছারুন নামে এক নারী বলেন, সাধারণত পরিকল্পনা করে ঘর সাজাতে দ্রব্যাদি কেনা হয় না। কোন মেলায় গেলে এসব জিনিপত্র কেনা হয়। তাই সেই উদ্দেশ্যে মেলায় আসা হয়েছে। তবে মেলায় আসা অনেক জিনিসি-পত্রই তার পছন্দ হয়েছে।
বিক্রেতারা বলেন, মেলায় ক্রেতার সংখ্যা সন্তোষজনক। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার সমাগম ঘটছে। জিনিপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় বেচা-বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। এছাড়া খুলনা প্রেসক্লাবের দু’দিনব্যাপী পিঠামেলার শেষ দিন শনিবার সকাল থেকে জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। শীতের বাহারি পিঠার মেলায় ভিড় করছেন নানা পেশার মানুষ। মেলা ঘুরে অনেককে পিঠা কিনে খেতে দেখা গেছে। অনেকে পিঠা কিনে পরিবারের জন্য নিয়ে গেছেন। খুলনা প্রেসক্লাবের পিঠামেলায় আসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাসুদুল আলম বলেন, শীতের দিনে পিঠা তৈরি করা আমাদের দেশের ঐতিহ্য। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের কারণে অনেকেই তা করতে পারেন না। পিঠা উৎসবে এসে তারা পিঠার স্বাদও নিতে পারছেন আবার বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচিতও হতে পারছেন।
প্রেসক্লাবের এমন উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
মঞ্জু নামের এক ব্যক্তি বলেন, পিঠামেলা এসে আমার খুব ভালো লাগছে, আমি এখানে অনেক ধরনের পিঠা খেয়েছি। আমি চাই প্রতিবছর যেন এইভাবে পিঠা লার আয়োজন করা হয়।
শখ পিঠা হাউজের স্বত্বাধিকারী ডালিয়া ইসলাম লীনা বলেন, পিঠামেলায় মানুষের ভিড়ও যেমন বেশি তেমনি বিক্রি ভালো। এখানে ক্রেতা হিসেবে বিভিন্ন পেশার লোকই আসছেন। এর মধ্যে তরুণীদের পছন্দ বিভিন্ন ধরনের ঝাল পিঠা, আর তরুণদের রসের পিঠা বেশি পছন্দ। দর্শনার্থী, বিমা গ্রাহক আর কর্মীদের সরব উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠের বিমামেলা। বিমার সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের বিমা পলিসি সম্পর্কে জানতে এবং পলিসি কিনতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
একটি ব্যাংকের জোনাল ইনচার্জ লিটন পাল বলেন, মেলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিমার সুফল সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারে। এতে করে বিমা সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণা দূর হয়। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পলিসি ল্যাপসও কমে যায়। খুলনার বিমা মেলায় আমাদের স্টলে মানুষের ভিড় ইতিবাচক। মানুষ বিমা সম্পর্কে জানতে আসছেন। দুইদিন না হয়ে ৫-৭ দিন বিমা মেলা হলে ভালো হতো।
ইউনি ভিশনের ব্যবস্থপনা পরিচালক হেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেলার উৎসব চলছে খুলনা শহরে। একের পর এক মেলা চলছে কে কোন মেলাতে অংশগ্রহণ করবে তা দিশা করে পারছে না। মেলা যেন শুধু আয়ের জন্য না হয়। মেলা মানে নতুন কিছু, মেলা মানে অনেক কিছু একছাদের নিচে।
খুলনাস ক্লাসি গার্লসের অ্যাডমিন লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, জানুয়ারি মাসজুড়ে প্রায় দিনই খুলনায় কোন না কোন এলাকায় মেলা রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও আসছে আরও কিছু মেলা। তার মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রয়্যাল হোটেলে তিন দিনব্যাপী ফাগুনমেলা শুরু হবে। এজন্য সব প্রাক প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্নের পথে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
এমআরএম/এএটি